সীমান্তের দিনযাপনে এ বার নতুন ভয় প্রহার

চর পরাশপুরের ইদ্রিশ শেখ বলছেন, ‘‘আমরা তো নিজ ভূমে পরবাসী, চাষের কাজ করতে যাও, বিএসএফ নগ্ন করে তল্লাশি চালাবে। পদ্মায় মাছ ধরতে যাও, গায়ে হাত তোলাটুকু বাধ দিয়ে বাকি যেটুকু অপমান পড়ে থাকে তা পিঠে নিয়ে নদীতে ভেসে যাওয়া।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

অসীম হালদার। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মানেই একটা আদিগন্ত কাঁটাতারের বেড়া আর অনুশাসন। সীমান্তে বসবাস মানেই বিএসএফের চোখরাঙানি আর পদ্মার ভাঙনে বর্ষা শেষে রাত জেগে প্রহর গোনা। সীমান্ত মানেই জলঙ্গির আখতার আলি বলছেন, ‘‘শুধু ভয় আর ভয়!’’ ডোমকল মহকুমায় সেই সীমান্ত বরাবর দিনযাপনের ছবিটা এখন আরও ত্রাস, আরও আতঙ্কের।

Advertisement

চর পরাশপুরের ইদ্রিশ শেখ বলছেন, ‘‘আমরা তো নিজ ভূমে পরবাসী, চাষের কাজ করতে যাও, বিএসএফ নগ্ন করে তল্লাশি চালাবে। পদ্মায় মাছ ধরতে যাও, গায়ে হাত তোলাটুকু বাধ দিয়ে বাকি যেটুকু অপমান পড়ে থাকে তা পিঠে নিয়ে নদীতে ভেসে যাওয়া।’’

সেই তালিকায় যেটুকু বাকি ছিল, এখন তাও সংযোজিত হয়েছে সীমান্তের জীবনে— প্রহার।

Advertisement

মাস দেড়েক আগে, জলঙ্গির কাকমারিতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলে জড়িয়েছিল বিএসএফ-বিজিবি। তার পরে মৎস্যজীবীদের বেশ কয়েকদিন নামতে দেওয়া হয়নি পদ্মায়। এমনকি সেই সময় এলাকার চাষিদের জমিতে যাওয়ার ব্যাপারেও দাঁড়ি পড়ে গিয়েছিল। কাকমারি চরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘বিএসএফের অত্যাচার সয়েই বড় হয়েছি। আমাদের ওঁরা সব সময় বাংলাদেশের নাগরিক ভাবেন। খেয়ালখুশি মতো নিয়ম তৈরি হয়। এখন আমাদের গায়ে হাতও উঠছে।’’

কাকমারি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার জলঙ্গিতে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সেই প্রহারের শিকার হলেন এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকও। গরু পাচারকারী ভেবে অসীম হালদার নামে রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বার বার নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও শুনতে হয়েছে, ‘‘ঝুট মত বোল্্!’’

এমন অপমান অবশ্য নতুন নয়। চরের প্রাথমিকে পড়াতে যাওয়া শিক্ষকদের খানা তল্লাশির বহর দেখে এক সময়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে নালিশও জানিয়েছিলেন রানিনগর ও নির্মলচরের শিক্ষককেরা।

রানিনগর চর এলাকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের দাবি, একটা সময় বিএসএফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন তিনি। চর পরাশপুর রবীন্দ্র রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা বলছেন, ‘‘রানিনগর এলাকায় পরিচয়পত্র নিয়েই চরের স্কুলে যেতাম। কিন্তু জলঙ্গিতে তেমন কোনও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি, ফলে প্রায় দিনই বিএসএফের কাছে অপমানিত হতে হয়।’’ তা যে হয় মেনে নিয়ে বিএসফের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘সমস্যাটা বুঝি। কিন্তু সীমান্ত এমন একটা স্পর্শকাতর জায়গা সেখানে সাধারণ জওয়ানদের এই কড়া প্রহরাটুকু না থাকলে চলাচলটা অনায়াস হয়ে যেত। তবু আমরা সতর্ক থাকার চেষ্টা করি, করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement