JU Student Death

বাড়িতে ফিরে বিরিয়ানি করতে চেয়েছিল ছেলে

বুধবার এ সব বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে মৃত ছাত্রের বাবা। কান্না জড়ানো গলায় বলেন, “ওরা আমার ছেলেটাকেই খেয়ে নিল!”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৮:১১
Share:

মৃত ছাত্রের বাড়িতে স্থানীয়দের কথা শুনছেন শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ছবি: প্রণব দেবনাথ

রান্না করতে ভালবাসত ছেলে। শুক্রবার বাড়ি ফিরে বিরিয়ানি রান্না করার কথা ছিল তার। কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হয়নি।

Advertisement

হস্টেলে যাওয়ার আগে ইউটিউব দেখে সে পিৎজা তৈরি করেছিল বাড়িতে। সবাই মিলে আনন্দ করে খেয়েছিলেন সেই পিৎজা। বাড়িতে রান্নার সময় মাকে হাতে-হাতে সব গুছিয়ে দিতে গিয়ে কবেই যেন তারও রান্নায় হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই রান্নার প্রতি তার ভালবাসা। তার পর ইউটিউব দেখে নানা ধরনের খাবার রান্না করত সে।

বুধবার এ সব বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে মৃত ছাত্রের বাবা। কান্না জড়ানো গলায় বলেন, “ওরা আমার ছেলেটাকেই খেয়ে নিল!”

Advertisement

আগের রবিবার ছাত্রটিকে যাদবপুরের হস্টেলে রেখে নদিয়ায় ফিরেছিলেন তাঁর বাবা আর ভাই। কথা ছিল, শুক্রবার তিনি বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তার আগেই ঘটনাটা ঘটে যায়। তার পর থেকে গোটা পরিবারের উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সোমবার নিজেদের বাড়িতে গিয়ে ছেলের পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেছেন বাবা। তারপর ফিরে এসেছেন ছেলের মামার বাড়িতে। আপাতত তাঁরা সেখানেই থাকছেন। ভিড় লেগে থাকছে সেখানেও। বহু মানুষের আনাগোনা চলেছে। আসছেন আত্মীয়-পরিজনেরা। সমবেদনা জানাতে আসছেন বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন। কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেন না তাঁরা। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বাবাও। ভাই আগের থেকে আরও চুপ মেরে গিয়েছে। তিন জনকেই ডাক্তার দেখানোর কথা চিন্তাভাবনা করছেন বাড়ির সকলে। সদ্য ডেঙ্গিতে ভোগা মেজোমামা আবার জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে নিয়েও একটা চাপা উদ্বেগ সকলের মনে। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে গোটা পরিবার।

বুধবার সেই বাড়িতে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ তৃণমূলের পাঁচ নেতামন্ত্রী। ব্রাত্য ছাড়াও ছিলেন শশী পাঁজা, কাকলী ঘোষ দস্তিদার, সায়নী ঘোষ ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ব্রাত্যপরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন, মৃত ছাত্রের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাইয়ের প্রতি যাতে কোনও অবিচার না তার জন্য সরকার পাশে থাকবে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৈরাজ্য দূর করা হবে। ব্রাত্যের মতে, কলকাতা মহানগরের কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় ওই ছাত্রের সঙ্গে যে ব্যবহার করল তা অকল্পনীয় এবং মানবতা বিরোধী। নারী ও শিশু সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা প্রশ্ন তোলেন, “সিসিটিভি লাগাতে না দিয়ে যাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন, বাধা দিয়েছিলেন, তাঁরা কেন প্রশ্ন করলেন না যে পাশ করে যাওয়া ছেলেরাও কেন এখানে থাকবে?” শুক্রবার সকালেই ছাত্রটির বাড়ির এলাকায় সুবিচারের দাবিতে স্থানীয় ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও ব্যবসায়ীরা মিছিল বার করেছিলেন। এ দিন সকালের ট্রেন ধরে প্রায় শ’খানেক পড়ুয়া, শিক্ষক ও অভিভাবক বগুলা থেকে যাদবপুরে পৌঁছে যান। শামিল হন প্রতিবাদ মিছিলে। সুবিচার না পেলে তাঁরা আবার মহানগরের রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করবেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু এ সবের কিছুই শান্তি দিতে পারছে না বাবা-মাকে। ঘুরে ফিরে তাঁরা একটাই প্রশ্ন করছেন, “শাস্তি পাবে তো আমার ছেলের খুনিরা?” ন’জন গ্রেফতার হয়েছে শুনেও তাঁরা বলছেন,“আগে তো শাস্তি পাক!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement