সাগরদিঘির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
তিনি যখন তৃণমূলে ছিলেন, সেই সময় মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে কী ঘটেছিল? মঙ্গলবার ভোটমুখী ওই কেন্দ্রে পা রেখে অতীতের সেই কাহিনি শোনালেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি করেন, ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহাকে হারাতে চেয়েছিলেন দলেরই নেতা তথা এ বারের প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সুব্রতের দাবি মেনে দেবাশিসকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু এটুকুই নয়, সেই সময়ে মমতার নির্দেশে দেবাশিসকে তৃণমূল থেকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করার কথা জনসভায় ঘোষণা তিনিই করেছিলেন বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। যদিও শুভেন্দুর এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, যে যাই বলুক, তৃণমূলই আবার জিতবে।
২০১১ সাল থেকে সাগরদিঘিতে টানা তিন বারের বিধায়ক ছিলেন সুব্রত। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি প্রয়াত হন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন। সেখানে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে স্থানীয় নেতা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি তৃণমূল নেত্রীর আত্মীয় হন। মমতার মা প্রয়াত গায়ত্রীদেবী দেবাশিসের বাবা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিসতুতো দিদি। ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরের ‘দ্বন্দ্ব’-এর কথা সর্বসমক্ষে ‘ফাঁস’ করে শুভেন্দু নির্বাচনী চাল চাললেন বলেই মনে করছে শাসকদলের স্থানীয় নেতারা। তবে তাঁরা সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না।এক নেতার কথায়, ‘‘এ সব অতীত বলে কোনও লাভ নেই। মানুষ বর্তমানকেই দেখেন।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন একটা সময় মুর্শিদাবাদে দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। সেই সময় তিনি দলের হয়ে কতটা খেটেছিলেন, সাগরদিঘির সভায় সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
সাগরদিঘিতে সভার শুরুতেই তৃণমূলের অতীতের কাহিনির কথা বলতে শুরু করেন। সেই কাহিনি বলতে গিয়ে কটাক্ষ করেন প্রাক্তন দলনেত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘অতীত কখনও ভুল হতে পারে না। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় বলেন, রাজ্যে চলে আসতে হবে। কারণ, দিল্লিতে আমার পরিচিতি বাড়ছিল। উনি তো নিজের ছাড়া অন্য কারও পরিচিতি পছন্দ করেন না। এখন অবশ্য ভাইপোকে পছন্দ করেন, উত্তরসূরি।’’ এ কথা বলার পরেই শুভেন্দু সেই ‘ইতিহাস’-এর কথা তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মালদহে ছিলাম। সেখানে সভা শেষের পর হেলিকপ্টারে করে সাগরদিঘিতে এসেছিলাম। সেখানে সুব্রত সাহার সমর্থনে সভা ছিল। বেলা তখন ১২টা। এপ্রিল মাস। প্রচণ্ড রোদ। সেই সভায় সুব্রত সাহা মমতাকে বলছিলেন, ‘দিদি, আপনার আত্মীয় দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় হারানোর চেষ্টা করছেন। কিছু একটা করুন।’’’ এর পরে কী কী হয়েছিল তা জানাতে গিয়ে শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় ডেকে বললেন, ‘সুব্রত চাইছে দেবাশিসকে দল থেকে বহিষ্কার করতে। আমি বলতে পারব না। আমাদের আত্মীয় হয়। তোমাকেই কাজটা করতে হবে।’ আমি মাইকটা নিলাম। বললাম, ছ’বছরের জন্য দেবাশিসকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হল।’’ এই ঘটনার রেকর্ড তাঁর কাছে আছে বলেও মঙ্গলবার দাবি করেন শুভেন্দু।
সুব্রত এবং দেবাশিসের এই অতীতের আখ্যান শোনানোর পরই সাগরদিঘিবাসীর উদ্দেশে বিরোধী দলনেতার বার্তা, ‘‘সাগরদিঘির মানুষকে বলব, এই দেবাশিস একদিন সুব্রতকে হারাতে চেয়েছিলেন। ওঁকে হারিয়ে প্রমাণ করে দিতে হবে যে, সাগরদিঘির মাটিতে এমন লোকের স্থান নেই।’’ প্রয়াত সুব্রতকে নিয়ে সাগরদিঘির মানুষের যে ‘আবেগ’ রয়েছে, তাতে ঘা দিতেই কি এই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়কের সঙ্গে বর্তমান তৃণমূল প্রার্থীর ‘তিক্ত স্মৃতি’ রোমন্থন করে উপনির্বাচনে ফায়দা তোলারই চেষ্টা করলেন শুভেন্দু? এমন প্রশ্নও তৈরি করে দিলেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টা মুখ খুলেছেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর থেকে বড় গদ্দার ভূ-ভারতে নেই। তাই ওঁর কাছ থেকে নীতিবাক্য শুনব না। মানুষ ঠিক করে নিয়েছে, এ বার তৃণমূলই জিতবে।’’