অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মালদহের জেলাশাসক। প্রতীকী ছবি।
খাতায়কলমে রয়েছে প্রকল্প। উপভোক্তাদের নামও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে নেই কোনও প্রকল্পের হদিস। এমন ১১০টি প্রকল্প ‘গায়েব’ হওয়ার অভিযোগ মালদহের গাজোল ব্লকের করকচ পঞ্চায়েতে। কাজ না করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েত প্রধান ফুলমণি হাঁসদা ও পঞ্চায়েতকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এক একটি প্রকল্পের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই টাকায় কেঁচো-সার উৎপাদন করে উপভোক্তাদের সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই প্রকল্পগুলি কাগজেকলমে থাকলেও তা কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। উপভোক্তারা এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মালদহের জেলাশাসক। এ নিয়ে ফুলমণির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এই অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্যি হলে দল পাশে দাঁড়াবে না।
গাজোলের করকচ পঞ্চায়েতে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে জৈব সার উৎপাদনের জন্য ১১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের কোনও কাজ গত তিন বছরে হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান ফুলমণি এবং পঞ্চায়েতকর্মীদের একাংশ প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পলাশ সরকার নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে লোক এসেছিল। আমার জমিতে সেই সার তৈরি হবে বলে ঠিক হয়। আমি নিজেই গর্ত করেছি। কিন্তু তার পর কোনও কাজ হয়নি। সব টাকা পঞ্চায়েত প্রধান আত্মসাৎ করেছেন। এক টাকারও কাজ হয়নি। আমরা ডিএমের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। যাঁরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁদের শাস্তি চাই।’’
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ী বলেন, ‘‘মালদহে ১০০ দিনের কাজে ২৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান ও কর্মীরা মিলে এই দুর্নীতি করেছেন। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামব। সবাইকে জেলে ভরে তার পরেই ছাড়ব।’’
যদিও দুর্নীতি ইস্যুতে পঞ্চায়েতের পাশে দাঁড়াননি তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। দল পাশে দাঁড়াবে না। প্রশাসন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। তদন্ত করে দেখে যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’’
তাঁর দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। তিনি বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাজোলের বিডিওকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সকল স্তরের নেতৃত্বকে ‘সাবধান’ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, সব দিকে তাঁর নজর রয়েছে। দলে কোনও রকমের দুর্নীতি তিনি বরদাস্ত করবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যেই মালদহের পঞ্চায়েতে এই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এল।