রুজি খাতুন নামে মালদহের বধূর মুখে ৪টি সেলাই পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মা ছবি খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
অতিরিক্ত পণের দাবিতে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের মামলা ঠুকেছিলেন স্বামী। বিয়েতে লক্ষ লক্ষ টাকা-সহ নানা সামগ্রী দিলেও অতিরিক্ত পণের দাবিতে অত্যাচার করতেন স্বামী। তা সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। মঙ্গলবার পণের টাকা ফেরত চাইতেই তাঁকে মারধর করে ছুরি মারেন স্বামী। মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বড়ই এলাকায় রুজি খাতুন নামে ওই বধূর মুখে ৪টি সেলাই পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মা ছবি খাতুন। মেয়েকে ছুরি মারার অভিযোগে জামাই আব্দুল গনির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ছবি। মঙ্গলবার তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে আব্দুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে চাঁচলের নেতাজি মোড়ে স্ত্রীকে মারধর করে ছুরি দিয়ে তাঁর মুখে আঘাত করেন বলে আব্দুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তাতে জখম রুজিকে তড়িঘড়ি চাঁচল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন। চাঁচল থানায় অভিযুক্ত জামাই আব্দুল গনির নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রুজির মা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাস আটেক আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে চাঁচল থানার সিঙ্গিয়া এলাকার যুবক আব্দুলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কুড়ি বছরের রুজির। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে অতিরিক্ত পণের দাবিতে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। স্ত্রীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতেন আব্দুল। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে যান রুজি। তাঁর মায়ের দাবি, সম্পত্তি বিক্রি করে জামাইয়ের দাবি মতো পণের লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও অতিরিক্ত টাকার জন্য চাপ দিতেন জামাই। ছবির দাবি, ‘‘৮ মাস হল মেয়ের বিয়ে হয়েছে। প্রথমে ২ লাখ, পরে ১ লাখ আর তারও পর ৭০ হাজার টাকা পণ দিয়েছি। বিয়েতে খাট, বিছানাও দিয়েছি। জামাইয়ের প্রথম বিয়ের পরেও টাকাপয়সা নিয়ে ওই বৌকে ছেড়ে দেয়। এখন বলছে, তৃতীয় বিয়ে করব। আসলে এটাই ওর ব্যবসা। বলছে, ‘পণের টাকা ফেরত দেব না।’ জামাই যেন আর বিয়ে করতে না পারে, এটাই চাই।’’
ছবির আরও দাবি, অতিরিক্ত পণের দাবি না মেটানোর জন্যই মেয়ের থেকে বিচ্ছেদ চেয়েছেন জামাই। মামলা চলাকালীন গত ৩ মাস ধরে আলাদা বসবাস করছেন তাঁর মেয়ে। তবে বিয়েতে পণের টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাতে রাজি নন জামাই। ছবির দাবি, ‘‘মেয়ের সঙ্গে আজ (মঙ্গলবার) চাঁচল স্টেশনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার মেয়েকে ধরে মারধর করে জামাই। সে সময় ওর হাতে একটা চাকুও ছিল। ওই চাকু দিয়ে মেয়ের মুখে আঘাত করেছে জামাই। মেয়ের মুখে ৪টা সেলাই পড়েছে। জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি ওর শাস্তি চাই।’’
এই ঘটনায় অভিযুক্ত আব্দুল গনিকে গ্রেফতার করেছে মালদহের চাঁচল থানার পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, ‘‘বধূর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) চাঁচল আদালতে তাঁকে হাজির করানো হবে।’’