হরিণ পালন করছেন সোহরাব

হরিণ-খুরেই জীবন বেঁধেছেন বদলে যাওয়া সোহরাবুদ্দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

হরিহরপাড়া থানায় সোহরাব। নিজস্ব চিত্র

সাতাশ বছর আগের রাত-দুপুরগুলো এখনও মনে আছে হরিহরপাড়া আর তার গা ঘেঁষা গ্রামগুলোর। দুরন্ত ছেলেকে ঘুম পাড়াতে মায়েরা বলতেন, ‘ওই দেখ এ বার সোহরাবুদ্দিন আসছে, ঘুমো দেখি!’

Advertisement

বারুদ গন্ধ ভুলে সেই সোহরাবুদ্দিনই এখন শিখেছেন হরিণের ভাষা।

আশির দশকের উত্তাল হরিহরপাড়ার সেই সোরাবুদ্দিন, দুই হাতে বন্দুক চালানো, থেকে নিমেষে বোমা ছো়ড়া— পুলিশকে তাক লাগিয়ে হারিয়ে যেত বাঁশ বাগানের আড়ালে। সেই মানুষটাই এখন থানার হরিণ পালক। ভরা বাম আমল তখন, সমাজবিরোদীদের তুমুল দাপটে ছন্নছাড়া হরিহরপাড়া-বহরান-চোঁয়া। সন্ধে হলেই বোমার হুঙ্কার। আর রাস্তার এ দিক ও দিক থেকে ছিটকে আসা গুলির শব্দ। দু’হাতে মেশিন (আগ্নেয়াস্ত্র) কিংবা ছুটতে ছুটতেই পায়ের পাতায় রাখা সকেট বোমা নিমেষে ছুড়ে দিচ্ছে সোহরাব— পুলিশ এগোতে পারছে না। বিপক্ষের লোকজন জড়োসড়ো হয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁশ ঝাড়ে। সেই সব ক্ষতবিক্ষত রাতের কথা এখনও মনে আছে পুরনো পুলিশ কর্তাদের। তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে তখন পুলিশও বড় ভয়ে ভয়ে রাত কাটাত, এই বুঝি সোহরাব তার তাণ্ডব শুরু করল।’’ আর সোহরাব?

Advertisement

সেই দিনটা আজও মনে আছে সোহরাবুদ্দিনের। বলছেন, ‘‘হয়তো বোমা-গুলিতেই এক দিন মরে যেতাম। পাল্টে দিলেন, তখনকার পুলিশ সুপার সৌমেন মিত্র। এক দিন ডেকে বললেন, ‘একটু সুস্থির হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে না!’ বাড়ি গিয়ে ভেবে দেখলাম, সত্যিই তো আমার জন্যই তো সাত-সাতটা মানুষ বেঘোরে মরল!’’ সেই ঘটনাটাই বুঝি ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে তাকে। থানায় হরিণ-বাগান করার পরে ডাক পড়ল তাঁর। খুন-রাজহানির অগুন্তি অভিযোগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে পুলিশ কর্তারা ডেকে বললেন, ‘‘ওই জগতে আর ফিরিস না, এই জল-জঙ্গল আর হরিণ নিয়ে থাক।’’

বারুদ মাখা হাত ধুয়ে সেই হরিণ-খুরেই জীবন বেঁধেছেন বদলে যাওয়া সোহরাবুদ্দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement