coronavirus

সংক্রমণের ভয়ে অচ্ছুৎ টাকাও

বাজার থেকে ফিরে দক্ষিণপাড়ার বাপ্পার যেমন অনেক কাজ বেড়েছে। বাড়ির ছাদে ছোট প্যান্ট পরে তিনি দীর্ঘক্ষণ কাগজের টাকা ও কয়েনের সঙ্গে সময় কাটান।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৪:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি

করোনা আতঙ্কে কাবু সকলে। রটছে নানা কথা। তার কোনটা সত্যি, কোনটা নয়, তা যাচাই না করেই কিছু গন্ডগোল তৈরি হয়ে যাচ্ছে। যেমন, কাগজে যে করোনাভাইরাস বাঁচতে পারে না, সে কথা কে শুনবে!

Advertisement

বাজার থেকে ফিরে দক্ষিণপাড়ার বাপ্পার যেমন অনেক কাজ বেড়েছে। বাড়ির ছাদে ছোট প্যান্ট পরে তিনি দীর্ঘক্ষণ কাগজের টাকা ও কয়েনের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি প্রথমে পকেটে থাকা কাগজের টাকা এক বালতি পরিষ্কার জলে সাবান গুঁড়ো মিশিয়ে সেখানে নোটগুলো ভাল ভাবে ডুবিয়ে দেন। সেটা ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট রাখার পর সেখান থেকে তুলে পরিষ্কার কাগজের মধ্যে রেখে শুকিয়ে নেন। তারপর কিছুক্ষণ রোদে রাখেন। পাঁচ টাকা বা দশ টাকার কয়েন পরিষ্কার জলে ধুয়ে বাটির গরম জলে গুঁড়ো সাবান মিশিয়ে দীর্ঘ সময় ফুটিয়ে নিয়ে তার শুদ্ধকরণ করেন। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

ওই পাড়ার বনশ্রী কাকিমা সন্ধ্যা হয়ে গেলে টাকা বা কয়েনে হাত দেন না। তিনি মনে করেন, দিনের বেলা রৌদ্রের তাপ রয়েছে। তার ফলে করোনার আক্রমণের ক্ষমতা কম। কিন্তু রাতে সেই উত্তাপ নেই। ফলে টাকার প্রয়োজন হলে প্রতিবেশিদের সাহায্য নেন। কিন্তু কোথা থেকে এ সব শুনেছেন, তা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারেন না। বনশ্রী মণ্ডল যেমন বলেন, ‘‘লোকের কাছে শুনেছি।’’

Advertisement

বেলডাঙা ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সোলেমান মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এমন ছুঁৎমার্গের কোনও কারণ নেই। যদি মনে করেন, টাকা অনেকের হাতে ঘুরছে, তা হলে টাকা এনে খানিকক্ষণ ফেলে রাখুন। তার পরে ব্যবহার করুন। এমন সব কাণ্ড করার দরকার নেই।’’ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই বলছেন, খবরের কাগজের ক্ষেত্রে ভয়ের আরও কোনও কারণই নেই। মিছিমিছি এই সব আতঙ্কে ভোগা অনুচিত।

অনেকে ডিজিটাল লেনদেন শুরু করছেন। পাড়ার মুদি বা ছোট পানের দোকানেও সেই একই অবস্থা। বেলডাঙা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা জনার্দন মণ্ডল বলেন, “আমি বাজারে মাছ বিক্রি করি। তাই পাইকারি বাজারে যেতে হয়। পরে খুচরো বাজারে কয়েকশো ক্রেতা আসেন। কত লোক, তাদের বাড়ি কোথায়, তারা কোন রাজ্য থেকে এসেছেন জানি না। ফলে যে টাকা রোজগার হয়, সেই টাকায় হাত দিতে বা বাড়িতে আনতে ভয় লাগে। তাই নানা ভাবে তার থেকে রোগের ভাইরাস কাটানোর চেষ্টা করি।” নরোত্তম হালদার বলেন, “আমাকে বহরমপুর বাড়ি করতে হয়। নানা মানুষের থেকে টাকা সংগ্রহ করি। তাই টাকা পরিষ্কার করে তবে

বাড়িতে রাখি। ”

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সবের কোনও ভিত্তি নেই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া কানাডা আগ বাড়িয়ে পলিমার নোট চালু করেছিল। করোনাভাইরাস টাকার মধ্যে দিয়ে ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় সেই মার্চ মাসের শুরুতে। ‘জার্নাল অফ কারেন্ট মাইক্রোবায়োলজি’তে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রামনের উল্লেখ হলেও কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে কারেন্সি নোট, সংবাদপত্র প্রভৃতির ব্যবহারের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় নি। ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ ভেলোরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে যত রকম ভাবে কোভিড সংক্রমন ছড়াতে পারে তার মধ্যে সংবাদপত্র, টাকা (কাগজের নোট) দিয়ে ছড়ানোর সম্ভবনা নেই বললেই চলে।” তাঁর কথায়, তাই বলা যায়, কাগজের টাকা সাবান জলে ধোওয়ার কোন যু্ক্তি নেই। বিজ্ঞান মেনেই চলা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement