মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ গ্রামবাসীদের। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনের অনুমতি ছিল না। এমনকি, হাই কোর্টে মামলা করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় রানাঘাটে ‘বাংলার সবথেকে বড় দুর্গা’র পুজো। সেই কারণে পুজোর কয়েক দিন মন ভাল ছিল না রানাঘাটের কামালপুরের বাসিন্দাদের। অসমাপ্ত ১১২ ফুট দুর্গামূর্তির সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও করেছেন তাঁরা। এ বার বিজয়া দশমীতে মাথা মুড়িয়ে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করলেন গ্রামবাসীরা!
অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেন কামালপুরের প্রায় ৫০ জন গ্রামবাসী। নদিয়ার কামালপুরের অভিযান সঙ্ঘের উদ্যোগেই এই কর্মসূচিতে যোগ দেন তাঁরা। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার জেরে পুজোর অনুমতি বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয় কামালপুর গ্রামে। মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড় দুর্গা’ নির্মাণের কাজ। ১১২ ফুটের দুর্গা তৈরি করে ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ নাম তোলার ভাবনাও ছিল কামালপুরের অভিযান সঙ্ঘের। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। এর পর থেকেই নানা ভাবে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন গ্রামবাসীরা।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে অসমাপ্ত দুর্গামূর্তির মুখে কালো কাপড় বেঁধে দেন উদ্যোক্তারা। শুধু তা-ই নয়, পুজোমণ্ডপ চত্বরও ঢেকে ফেলা হয় কালো কাপড়ে। এক দিনের জন্য অরন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন গ্রামের মহিলারা। অষ্টমীতে অভিযান সঙ্ঘের মাঠে শোকপ্রসাদ বিতরণ করে প্রতিবাদ জারি রাখেন এলাকাবাসী। আর বিজয় দশমীর দিন মাথা নেড়া করে অনন্য প্রতিবাদে শামিল হলেন এলাকার মানুষ।
কেন এই প্রতিবাদ? গ্রামের বাসিন্দা অমল সরকার বলেন, ‘‘আমরা দুর্গাপুজো করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের অসহযোগিতায় পুজো করতে পারিনি। তাতে আমাদের যে পাপ হয়েছে বা যে পাপ করতে বাধ্য হয়েছি, তার জন্যই মাথা মুড়িয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করছি।’’ ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজুর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত গ্রামের ৪৭ জন মাথা নেড়া করেছেন। রবিবারের মধ্যে প্রায় সব গ্রামবাসী এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।’’
প্রসঙ্গত, ১১২ ফুটের দুর্গার পুজোতে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অনুমতি পেতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ক্লাব কর্তারা। আদালত নদিয়ার জেলাশাসককে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল। জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ পরিদর্শন করার পর পুজোর অনুমোদন বাতিল করে দেন। গ্রামবাসীরা আর্জি জানালেও কোনও লাভ হয়নি।