ফাইল চিত্র।
ইতিমধ্যে খেত থেকে উঠতে শুরু করেছে জলদি জাতের আলু। জেলায় মুলত পোখরাজ জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। চাষিরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বেশি হয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই আলুর দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা। চলতি মাসে নেই হিমঘরে আলু রাখার সুযোগ। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের।
বর্তমানে আলুর যা দাম, তাতে চাষের খরচটুকুই উঠছে না বলে দাবি চাষিদের একাংশের। জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে নতুন আলু (পোখরাজ) বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে বড় জোর দশ টাকা কেজি। ৫০ কেজির বস্তা হিসেবে হরিহরপাড়া, বহরমপুর, ডোমকলের বিভিন্ন আড়তে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকা দরে অর্থাৎ ছয় থেকে সাড়ে ছ’টাকা দরে। তবে চাষিরা ওই আলুর দাম পাচ্ছেন চার থেকে বড় জোর চার টাকা ২০ পয়সা দরে।
রবিউল ইসলাম নামে এক আলুর কারবারি বলেন, ‘‘কান্দির বিভিন্ন এলাকা, বর্ধমান থেকে আলু আসছে। সেখানে ২০০-২১০ টাকা দামে আলু মিলছে। প্যাকেট, বহন খরচ প্যাকেট পিছু ৫০-৬০ অতিরিক্ত টাকা পড়ছে। হাটে-বাজারে, দোকানে পৌঁছে দিয়ে আমরা আলুর দাম পাচ্ছি প্যাকেট পিছু তিনশো টাকার আশেপাশে।’’
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে জেলায় সর্বাধিক আলু চাষ হয় কান্দি মহকুমার বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর ১ ব্লকে। হরিহরপাড়া, বহরমপুর, বেলডাঙা ব্লকেও আলুর চাষ হয়। জেলার চাষিরা জলদি জাতের পোখরাজ, কুফরি, জ্যোতি, চন্দ্রমুখী আলু চাষ করে থাকেন। ইতিমধ্যে জলদি জাতের আলু (৬৫-৭০ দিনের ফসল) খেত থেকে উঠতে শুরু করেছে। খেতে চাষিরা ওই আলুর দাম পাচ্ছেন ২০০ থেকে বড় জোর ২১০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। কান্দি মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা পরেশনাথ বল বলেন, ‘‘এ বছর আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে অনুকূল ছিল। ফলে ফলন ভাল হয়েছে। ফলন বেশি হওয়ায় আলুর দাম কমেছে। পর্যাপ্ত দাম না পাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’’ এ বছর কাঠা প্রতি চার থেকে পাঁচ মন অর্থাৎ বিঘা প্রতি ৩২ থেকে ৪০ কুইন্টাল।
চাষিরা বলছেন, এ বছর আলুর বীজের দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও বাড়তি দাম দিয়ে রাসায়নিক সার কিনতে হয়েছে।
অন্য দিকে বেড়েছে সেচ ও শ্রমিকের খরচও। ফলে খেত থেকে আলু বিক্রি করে চাষের খরচটুকুই উঠছে না। বড়ঞার এক আলু চাষি বলেন, ‘‘এক বিঘা আলু চাষ করতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু আলু বিক্রি করে ঘরে উঠছে বারো থেকে তেরো হাজার টাকা। ফলে চাষের খরচটুকুই উঠছে না।’’ হরিহরপাড়ার চাষি বিফল মণ্ডল বলেন, ‘‘আলু ঘরে রাখা যায় না। ফলে দাম কম হলেও খেত থেকে তোলার পর তা বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
জেলার সহকারী কৃষি বিপণন আধিকারিক (প্রশাসন) মুহাম্মদ আলি বলেন, ‘‘আলুর দাম না পাওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছেন এটা ঠিক। আগামী ১ মার্চ থেকে হিমঘরগুলি খুললে চাষিরা আলু রাখতে পারবেন। অসময়ে দাম বাড়লে তখন চাষিরা আলু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন।’’