রাস্তা মেরামতের দাবিতে পোলিয়ো বয়কটের রেওয়াজ মুর্শিদাবাদ জেলায় নতুন নয়। হালে, দাবি আদায়ের সেই তালিকায় নয়া সংযোজন ঘটেছে— স্কুলে তালা। সোমবার, সেই চেনা নজির ফিরিয়ে দিয়েছে জঙ্গিপুরের বাহাদিডাঙা গ্রাম। ডোমকলের ডুমুরতলা এবং কামুরদিয়াড় সেই ‘ট্রাডিশন’ বজায় রেখেছে! এলাকার খুচরো দাবি আদায়ের প্রশ্নে নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উপর এই অযাচিত কোপ দেখে সরকারি আমলাদের সঙ্গে সমালোচনা করেছেন জেলা ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস, ‘‘পোলিও নিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কার এখন আর মানুষের মনে নেই, কিন্তু এখনও কোথাও কোথাও মানুষ নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য পোলিয়োকে হাতিয়ার করছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’’
তা নিয়ে অবশ্য ডুমুরতলার গ্রামবাসীদের তেমন হেলদোল আছে বলে মনে হয়নি। গ্রামের অনেককেই এ দিনও বলতে শোনা গিয়েছে— ‘কান টানলে মাথা আসে, প্রশাসন থেকে নেতারা কানে তালা দিয়ে বসে থাকলে পোলিয়ো বয়কট করাই সেরা উপায়!’ গ্রামের ধর্মীয় নেতা-মাতব্বরদের ব্যবহার করে প্রশাসন পোলিয়ো খাওয়ানোর প্রশ্নে জেলাকে প্রায় একশো শতাংশ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেও নতুন করে এই পোলিয়ো বয়কটের হিড়িক কপালে ভাঁজ ফেলেছে তাঁদের। দিন কয়েক আগে ডোমকলের ডুমুরতলা এবং কামুড়দিয়াড় এলাকায় রাস্তার দাবিতে পোলিয়ো বয়কট করে গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, দশ বছর ধরে ডুমুরতলার মানুষ নানাভাবে প্রশাসনের নজরে এনেছেন রাস্তার বেহাল দশার কথা। লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা পোলিয়ো বয়কট করেছেন। গ্রামবাসী রাকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেছেন, ‘‘এখন পোলিয়ো বয়কট করলে অনেকে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু বর্ষার সময় গ্রামের মানুষ যখন হাটু কাদা ভেঙে হাসপাতালে যান, প্রায় সাঁতার কেটে স্কুলে যায় বাচ্চারা, তখন তাদের অবস্থাটা দেখার কেউ থাকেন না।’’ পোলিয়ো বয়কটে আখেরে ক্ষতি যে সন্তানের, কামুড়দিয়াড়ের জন্নত বিবি সে কথা জানেন। তবে ছেলের জন্য কপালে ভাঁজ পড়লেও গ্রামের মাতব্বরদের উপেক্ষা করার সাহস তাঁর নেই। বলছেন, ‘‘বুঝতে পারি, ভুল করছি, তবু কী করব বলুন!’’বিএমওএইচ রশিদ মামন জানান, এ বছর ডোমকল ব্লকের শূন্য থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৪৪৮ জন শিশুকে পোলিয়ো খাওয়ানোর টার্গেট ছিল। কিন্তু গোটা ব্লকে এখনও পর্যন্ত ৮১৫ জন শিশুকে পোলিও খাওয়ানো যায়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘নিজের সন্তানকে বাজি রেখে রাস্তা মেরামতের দাবি করাটা বোধহয় ঠিক নয়।’’