জাল নোটে জেরবার পুলিশ

একের পর এক সাজা ঘোষণা হচ্ছে, তা সত্ত্বেও জাল নোট কারবারের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো যাচ্ছে না কেন? এমনকি যে পথ দিয়ে জাল নোটের কারবার চলছে, সেই পথে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে না কেন? 

Advertisement

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৬
Share:

গত দশ দিনে জাল নোটের কারবারের দুটি মামলায় দু’জনের সাজা দিয়েছে জঙ্গিপুর আদালতের বিচারক।

ফের জাল নোট-সহ গত দু’দিনে সুতি ও ফরাক্কা এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পাঁচ জন কারবারিকে।

Advertisement

সোমবার রাতে সুতি থানার মানিকপুর মোড় থেকে আব্দুল খালেক, রফিকুল ইসলাম ও সায়েদ শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বাড়ি যথাক্রমে ফরাক্কার শিবনগর, খোদারামপুর ও রামরামপুর। পুলিশ জানায়, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সুতির মানিকপুর মোড়ে প্রায় ৮৬ হাজার টাকার জাল নোট নিয়ে ক্রেতাদের জন্য ধৃত ওই তিন জন অপেক্ষা করছিল। খবর পেয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই ভাবে ওই রাতে ফরাক্কা থানার পুলিশ জাল নোট-সহ গ্রেফতার করেছে ফরাক্কার শিবনগরের সামাদ শেখকে। মঙ্গলবার রাতে ওই শিবনগর গ্রামেরই নবি শেখকে জাল নোট-সহ ধরেছে ফরাক্কা থানার পুলিশ।

এ দিকে গত দশ দিনে জাল নোটের কারবারের দুটি মামলায় দু’জনের সাজা দিয়েছে জঙ্গিপুর আদালতের বিচারক। জাল নোট কারবারের একটি মামলায় সাজা হয়েছে সাহাদুল্লা শেখের। বুধবার অন্য একটি মামলায় সাজা হয়েছে মনিরুল শেখের। মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে জাল নোট নিয়ে আসার পথে ধুলিয়ান ফেরিঘাট থেকে শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ ওই দুজনকে পাকড়াও করেছিল।

Advertisement

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ নিয়ে গত পাঁচ বছরে জাল নোটের কারবারি কমপক্ষে ৪২ জনের সাজা হয়েছে জঙ্গিপুর আদালতে। এদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া যেমন রয়েছে, তেমনি ৬০ বছরের বৃদ্ধ রয়েছে। তার মধ্যে মালদহের বৈষ্ণবনগরের গোপেশ মণ্ডলের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে, জাল নোট মামলায় রাজ্যের মধ্যে এটাই প্রথম সাবজ্জীবন সাজা।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই যে একের পর এক সাজা ঘোষণা হচ্ছে, তা সত্ত্বেও জাল নোট কারবারের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো যাচ্ছে না কেন? এমনকি যে পথ দিয়ে জাল নোটের কারবার চলছে, সেই পথে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে না কেন?

যদিও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, ভারতে যে জাল নোটের কারবার চলে, সেই জাল নোট তৈরি হয় বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানা এলাকায়। ফলে ওই এলাকার সব চেয়ে কাছের সীমান্ত পথকেই জাল নোট পাচারের জন্য কারবারিরা বেছে নিচ্ছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এ দিকে মালদহের বৈষ্ণবনগর ও কালিয়াচক দিয়ে বেরোনোর পথ বলতে দুটো— ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জের ধুলিয়ান। সুতির কিছুটাও অংশে রয়েছে সীমান্ত এলাকা। সেখান দিয়ে মুর্শিদাবাদ হয়ে রাজ্যের যে কোনও জায়গায় চলে যাওয়ার পথ খোলা। জাল নোট কারবারিরা পাচারের করিডোর হিসেবে এই পথ বেছে নেয় বলেও পুলিশ জেনেছে।

এই দুই দেশের সীমান্ত পথে জাল নোট লেনদেনের সব চেয়ে বড় ঘাঁটি এখন মালদহ ও মুর্শিদাবাদ। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত সংলগ্ন থানাগুলিতে পুলিশের হাতে জাল নোট ধরা পড়ছে। গত দু বছরে শুধু মাত্র ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জ এলাকা থেকেই ধরা পড়েছে প্রায় ১.৪০ কোটি টাকা। গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৯৫ জন। গত জুলাই মাসেই এই দুই থানায় জাল নোট ধরা পড়েছে ৭.৩৪ লক্ষ টাকা , গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন।

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ওই চেনা রাস্তায় আগের চেয়ে পুলিশের নজরদারি বেড়েছে। তাই জাল নোট নিয়ে মালদহ থেকে ঢোকার মুখে ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জ পুলিসের চোখ এড়াতে পারছে না পাচারকারীরা। ফলে ওই দুই থানায় জাল নোট কারবারিরা ধরা পড়ছে বেশি।”

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement