পুজো দেখতে ভিড় দর্শনার্থীদের। নিজস্ব চিত্র।
প্রাচীন কাল থেকে বাংলায় শক্তি রূপে হিসেবে পূজিতা হন দেবী কালিকা। নদিয়া জেলায় বৈষ্ণব প্রভাব থাকলেও এই জেলাতেই কিন্তু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের মতো মহাতান্ত্রিক জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবদ্বীপে শাক্ত রাসের সময় বিভিন্ন দেবীর পূজা হয়। তবে এই জেলাতেই যে মা কালী এক ভিন্ন রূপে বিরাজ করেন, তার খবর খুব বেশি প্রচারিত নয়। এই কালীপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী 'শুয়োরে কালীমাতা' নামে পরিচিতা। মঙ্গলবার বিশেষ উপচার মেনে পূজিতা হলেন 'শুয়োরে কালী'।
এই কালীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশভাগের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানের মধ্যে পড়ে আদি ‘শুয়োরে কালীপীঠ’। তবে পুজোর ‘আজ্ঞাবাহক’রা চলে আসেন ‘হিন্দুস্তান’-এর নদিয়ার পাবাখালিতে। আর ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলে সেই পীঠস্থান গিয়ে পড়ে বর্তমান রাজশাহীতে।
তার পর গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। সীমান্তে বসেছে কাঁটাতার। এ পারের মানুষ সব সময় সীমান্ত পেরিয়ে যোগাযোগ রাখতে পারেন না বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক কালীপীঠের সঙ্গে। তবুও নিয়ম মেনেই হয় পুজো।
শুয়োরে কালী— কেন এই অদ্ভুত নাম? বলা হয়, শুয়োরছানা বলি ছাড়া এই পুজো অসম্পূর্ণ। তাই এমন নামকরণ। কথিত আছে, বাংলাদেশে পুজো সম্পন্ন হওয়ার পরেই নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালিতে শুরু হয় এই ‘শুয়োরে কালী’ দেবীর আরাধনা।
পুজোর বয়স আনুমানিক ২৫৪ বছর। কালীপুজোর উদ্যোক্তা সুফল রায়ের কথায়, ‘‘বাংলাদেশের যে স্থানে শুয়োরে কালী দেবীর আরাধনা হয়, সেখানে কালী মূর্তি আকারে পূজিত হন। পুজো সম্পন্ন হওয়ার পরেই নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির উপর দেবী ভর করেন। অর্থাৎ, তিনি আদেশ দেন বাংলাদেশের পুজো শেষ হয়েছে। এ বার এখানে পুজো শুরু হোক।’’
এ পুজোর নিয়ম-নীতি আর পাঁচটা পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমেই ৫১ জন পুরুষ চূর্ণী নদীতে গিয়ে ডুব দিয়ে ঘড়া ভরে জল নিয়ে আসেন। তার পর মানত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সংখ্যায় শুয়োরের বলির মাধ্যমে এই পুজো সম্পন্ন হয়।
এ বার যেমন ১৭টি শুয়োরছানা বলি দেওয়া হয়েছে। যত বলি তত ঢাক। কোনও প্রতিমা থাকে না। শুধু ৫১টি ঘট বসিয়ে পুজো হয়। উদ্যোক্তারা জানান, যে হেতু বাংলাদেশের মূল থানে কালী মূর্তি আসীনা, তাই এখানে ঘট বসানো হয়। এখানে কোনও পুরোহিত লাগে না। ওঁদের বংশধরেরা পুজো করেন। বর্তমানে পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যিনি দায়িত্বে থাকেন, সেই পচা রায়ের কথায়, ‘‘কে বলি দেবে, সেই আদেশ দিব্য বার্তার মাধ্যমে আসে। যাঁর হাতে দা তুলে দেন দেবী, তিনিই বলি দেওয়ার অধিকার পান।’’
কলকাতা থেকে গেদে লোকালে মাজদিয়া স্টেশনে নেমে টোটো করে পৌঁছানো যাবে এই ‘শুয়োরে কালী’ পীঠে । কলকাতা থেকে পাবাখালির দূরত্ব ১১০ কিমি। কৃষ্ণনগর থেকে বাসে শিবনিবাস বাসস্ট্যান্ডে নেমে টোটো করে পাবাখালি যাওয়া যাবে। কৃষ্ণনগর থেকে দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার।