ভিটে হারিয়ে নতুন ঠিকানা। হোসেনপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
অবশেষে টনক নড়ল প্রশাসনের। বুধবার ত্রাণ পৌঁছল হোসেনপুরে। মিলল কিছু ত্রিপল, পোশাক। তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও এ দিন উনুনে হাঁড়ি চড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে গ্রামের লোকজন।
এ দিন সকালেই ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী গিয়েছিলেন হোসেনপুরে। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সামলাতে গ্রামের দু’জায়গায় ত্রাণ শিবির খুলে রান্নার কাজ শুরু করা হয়েছে। এই শিবির চালু থাকবে।”
এ দিকে হোসেনপুরে ভাঙন থামার কোনও লক্ষণ নেই। বুধবারেও ভাঙন থামেনি। এ দিকে সুযোগ বুঝে এলাকার একশ্রেণির জমি মালিক গৃহহারাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আনা মালপত্র রাখতে দেড় হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করতে শুরু করায় মাথায় হাত পড়েছে অনেকেরই।
স্ত্রী অনিমাকে নিয়ে কোনও রকমে একটি জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন সুজিত চৌধুরী। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে আরও ১৮টি পরিবার। সুজিত বলেন, “কোথায় যাব? স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তাই বাধ্য হয়েই নগদ দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে মাঠেই আশ্রয় নিয়েছি।”
বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী দীপিকা মণ্ডল মালদহের কলেজে পড়েন। বোন লিপিকা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দীপিকা বলছেন, “গ্রামের প্রায় ৪৫ জন ছেলেমেয়ে স্কুল, কলেজে যায়। গত দু’সপ্তাহ থেকে সব বন্ধ। অনেকেরই বইখাতা জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্কুলের পরীক্ষাও দিতে পারছে না কেউই।”
শঙ্করী মণ্ডল বলছেন, “কিছুটা চাল বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু রান্না করার জায়গা কোথায়? সামান্য ক’টা ত্রিপল এসেছিল। কেউ কেউ পেয়েছেন, অনেকেই পাননি।”
হোসেনপুরে সরকারি ফ্লাড শেল্টার দেখে তো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। বড় জোর ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের এক তলা বাড়ি। সেখানে দুটো ঘর রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘‘নামেই সরকারি ফ্লাড শেল্টার! ক’জন লোক এখানে আশ্রয় নিতে পারবে, বলুন তো? অথচ বন্যা, ভাঙন হোসেনপুরে নতুন কিছু নয়।’’
সুমিত্রা মণ্ডল বলছেন, “বাড়িতে ছ’টা ছাগল ছিল। বুধবার দুটো ছাগল বিক্রি করতে পাঠিয়েছি। কী করব, বাঁচতে হবে তো!”
রিঙ্কু মণ্ডল বলছেন, “মেয়েটার তিন দিন ধরে জ্বর। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব সে সামর্থ্যও নেই। স্বাস্থ্য দফতর থেকে এখন আর দিদিমণিদেরও দেখা মিলছে না। জ্বর গায়েই পড়ে আছে মেয়েটা।”
শনিবার মহালয়া। পুজোর আর দেরি নেই। সেই পুজোর আগেই ভিটে হারিয়ে রাত জাগছে হোসেনপুর। নদীর ঝুপ-ঝাপ শব্দে কেঁপে উঠছে বুক। ভাঙনে উধাও পুজোর আনন্দ।