‘এই বয়সে কি দেশছাড়া হতে হবে?’

শেষ বয়সে এসে তীব্র ভয় গ্রাস করেছে সত্তর পার করা রসরঞ্জন গণপতিকেও। তিনিও এ দেশে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের আগে। একাত্তর সালে। বরিশালের রাজাপুর গ্রাম থেকে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার 

ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩২
Share:

শিকড় ধরে টানাটানি ভয় দেখাচ্ছে। ফাইল চিত্র

লাল নাইলনের ব্যাগের ভিতর থেকে কাগজটা বের করলেন অশুতোষ দাস। কম্পিউটার প্রিন্ট। বলছেন, “জমি বে-অইনি দখলের কাগজ এটা। সেই জমিতে আমরা এখন বাস করছি। প্রমাণ বলতে শুধু এটাই। তা-ও অনেক কষ্ট করে জোগাড় করেছি। জানি না এতে কিছু প্রমাণ করতে পারব কি না।” তার পর কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে যান তিনি। হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কারণ, টানা কয়েক দিন ধরে দেশছাড়া হওয়ার আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

Advertisement

গোটা ধুবুলিয়া তাঁকে চেনে। ধুবুলিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের টানা তিন বারের সদস্য। তিন বারই তিনি সিপিএমের টিকিটে জয়ী হয়েছেন। তবে এ বার জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বাবা সীতানাথ দাস মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশের চরপাতালিয়া থেকে ভারতে চলে এসে ধুবুলিয়া বসবাস শুরু করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জমির পাট্টা পাননি। আশুতোষবাবুরা তিন ভাই, তিন বোন। সকলেই চিন্তায় রয়েছেন। তাঁরা কেউই জমির পাট্টা পাননি এখনও। নাগরিকত্বের প্রমাণ বলতে ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড। আশুতোষবাবু বলছেন, “জমির পাট্টা ছাড়া অসহায় লাগছে। ছয় ভাইবোনই চরম ভয়ে আছি।”

শেষ বয়সে এসে তীব্র ভয় গ্রাস করেছে সত্তর পার করা রসরঞ্জন গণপতিকেও। তিনিও এ দেশে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের আগে। একাত্তর সালে। বরিশালের রাজাপুর গ্রাম থেকে। সব হারিয়ে স্ত্রী আর মা-কে নিয়ে রাতের অন্ধকারে কোনও রকমে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে এ পারে এসে শ্যামনগর, আন্দামান হয়ে শেষে ধুবুলিয়ায় রানওয়ের পাশে উদ্বাস্তু কলোনিতে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এখন তিন ছেলে, নাতিপুতি নিয়ে ভরা সংসার। কিন্তু পাট্টা পাননি আজও। এনআরসি-র প্রসঙ্গ তুলতেই ফোঁস করে ওঠেন, “শুনছি অসমে নাকি অনেক হিন্দুর নাম তালিকায় নেই! এই বয়সে কি আমাদের ফের দেশ-ছাড়া হতে হবে?” এই প্রশ্নটাই এখন ধুবুলিয়ার উদ্বাস্তু শিবির-জুড়ো। একবার শিকড়হারা হওয়ার যন্ত্রণা পেয়েছেন তাঁরা। আবার সেই রকম অভিজ্ঞার সামনে পড়ার আশঙ্কায় শিউড়ে উঠছেন। অনেক লড়াই, অনেক যাতনার পর যখন পায়ের তলার মাটি একটু শক্ত হয়েছে ঠিক তখনই আবার সেই একই ভাবে শিকড় ধরে টানাটানি!

Advertisement

১৯৪৯ সালে খুলনা থেকে এসেছিলেন রবীন মৃধা। তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবার এখনও জমির পাট্টা পায়নি। উদ্বাস্তু শিবিরের রেশন কার্ড ছিল, কিন্তু সেটাও এত দিন পরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! সেই সময় কার প্রমাণ বলতে হাতে আছে, রবীনবাবুর নামে ১৯৬৭ সালে তৈরি একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স। তাকেই খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরে আছেন ছেলে কৃষ্ণকান্ত মৃধা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement