প্রতীকী চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের ঠিক আগের দিন বুধবার নদিয়ার দুই পুরসভা কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুরে নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে এল সিবিআই। অথচ রানাঘাট পুরসভার ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সেখানে তাদের পা পড়ল না। সেই নিয়োগের সময়কার পুরপ্রধান বর্তমানে বিজেপিতে থাকায় এই ব্যতিক্রম হল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে দু’দফায় রানাঘাট পুরসভায় মোট ১০০ জন কর্মী নিয়োগ হয়েছে। তার জন্য অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজ়োন-কে নিয়োগ সংক্রান্ত বরাত দেওয়া হয়েছিল। মূলত ওই সংস্থা পরীক্ষা পরিচালনার কাজ, অ্যাডমিট কার্ড তৈরি, আবেদনকারীদের কাছে ওই অ্যাডমিট পৌঁছে দেওয়া, ওএমআর শিট তৈরি ইত্যাদি কাজ করেছিল। পরে নিয়োগ কমিটিতে জেলাশাসকের প্রতিনিধি, কয়েক জন কাউন্সিলর, ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ-এর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষার ১:৫ অনুপাতে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রার্থীদের ডাকা হয়।
রানাঘাট পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ৬৬ জন ও ২০১৯ সালে ৩৪ জনকে শূন্যপদে নিয়োগ করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই হয় পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, অন্যথায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসাবে আগে থেকেই পুরসভায় কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি সামনে আসতেই সিপিএমের তরফে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলে পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
ফলে রাজ্য জুড়ে এ দিন ১৪টি পুরসভায় একযোগে সিবিআই হানা দিলেও রানাঘাট পুরসভা কেন বাদ থাকল, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআইকে ব্যবহার করার অভিযোগ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই রয়েছে। এ দিন তা ফের উসকে উঠেছে। কারণ, যে সময়ে রানাঘাট পুরসভায় ওই নিয়োগ হয়েছিল, তখন পুরপ্রধান ছিলেন পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। তখন তিনি তৃণমূলে। বর্তমানে তিনি নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি ও রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক।
সিপিএমের রানাঘাট এরিয়া কমিটির সম্পাদক কমল ঘোষের কটাক্ষ, "সেই সময় রানাঘাট পুরবোর্ডের মাথায় থাকা পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় দলবদল করে বিজেপিতে গিয়েছেন। সেই কারণেই কি নিয়োগ দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হওয়া রানাঘাট পুরসভা সিবিআই তদন্ত থেকে বাদ গেল?" পার্থসারথীর পাল্টা বক্তব্য, ''জেলার একাধিক পুরসভায় ওই সময়ে নিয়োগ হয়েছিল। এ দিন দু’টি পুরসভায় সিবিআই হানা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি তো বীরনগর বা কল্যাণীর পুরপ্রধান ছিলাম না। তা হলে ওই পুরসভাগুলিতে সিবিআই গেল না কেন?” তাঁর মত, "যেখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে সিবিআই মনে করছে, সেখানেই গিয়েছে।"
রানাঘাটের বর্তমান পুরপ্রধান, তৃণমূলের কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''সিবিআই অফিসারেররা চাইলে রানাঘাট পুরসভায় আসতেই পারেন। তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।''