—প্রতীকী চিত্র।
এক দিনে নয় সদ্যোজাতের মৃত্যু মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এমন অবস্থায় তাদের রেফার করা হয়েছে যে, বাঁচানোই সম্ভব হয়নি! অন্তত তেমনটাই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সঙ্কটজনক অবস্থায় এখনও অনেক শিশু চিকিৎসাধীন ওই হাসপাতালে। জেলার নামী সরকারি হাসপাতালে এমন পরিস্থিতিতে বেশ উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল জানান, শিশুমৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এ-ও বলেন, ‘‘অযথা রেফার প্রবণতা আটকাতে মহকুমা হাসপাতালগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মাসখানেক ধরে সংস্কারের কাজ চলছে। অভিযোগ, হাসপাতালের এসএনসিউ ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসকও। পরিকাঠামো না থাকায় শিশুদের ভর্তি না নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ডোমকল, লালবাগ-সহ একাধিক মহকুমা হাসপাতালগুলিতেও। অভিযোগ, শিশুদের জন্য ভেন্টিলেটরের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে ওই হাসপাতালগুলি থেকেও সদ্যোজাতদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে। মেডিক্যালের পাল্টা দাবি, অধিকাংশ সময়েই অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় শিশুদের নিয়ে আসছে পরিবার। মূলত দেরিতে নিয়ে আসার কারণেই এমন পরিস্থিতি। মেডিক্যালের প্রিন্সিপাল অমিত দাঁ বলেন, ‘‘যে সময় শিশুগুলিকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সে কারণেই তাদের আর বাঁচানো যায়নি।’’
মেডিক্যালের একটি সূত্রের দাবি, হাসপাতালে সদ্যোজাতদের ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৫৪টি। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১০০-র বেশি নবজাতক। এতে এক শিশুর থেকে অন্য শিশুর শরীর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে।
জেলার কয়েকটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকেও একই ভাবে অসুস্থ শিশুদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভ উগরে দিয়ে অসুস্থ শিশুদের পরিবারগুলির বক্তব্য, সিজ়ারিয়ান ডেলিভারির পর আর দায় নিতে চাইছেন না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। সদ্যোজাতদের ফুসফুসে সামান্য সংক্রমণ দেখা দিলেই তারা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দিচ্ছে! সেখানেও সঠিক চিকিৎসা মিলছে না। একই বেডে তিন-চার শিশু একসঙ্গে থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এক অসুস্থ শিশুর আত্মীয় চন্দনা রায় বলেন, ‘‘নার্সিংহোমে বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার পর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোনও চিকিৎসা ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দিল। বাচ্চাদের চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো বেসরকারি নার্সিংহোমে না থাকার সত্ত্বেও কেন তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে?’’