(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলার রাজনীতি অতীতে নানান বিষয়ে ‘কলতলার ঝগড়া’ দেখেছে। এ বার যোগ হল ‘ছাঁদনাতলা’।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অকৃতদার। এ বার তাঁর জন্য পাত্রী চান তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সেই মর্মে কাঁথির শান্তিকুঞ্জে (শুভেন্দুর বাড়ি) বার্তাও পাঠালেন কুণাল। শুভেন্দুর পরিবারের উদ্দেশে তৃণমূল মুখপাত্রের বার্তা, শীত থাকতে থাকতেই বিয়েটা দিতে হবে। গরম পড়ে গেলেই বিপদ। পাগলামি আরও বেড়ে যাবে!
হঠাৎ কেন শুভেন্দুকে ছাঁদনাতলায় পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন কুণাল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো আবেশের বিয়েতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজির রাখা নিয়ে দু’দিন আগেই ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) পোস্টে সমালোচনা শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বৃহস্পতিবারেও বিরোধী দলনেতা সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার নিয়ে সরব হন। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর বিয়ে স্টেট স্পনসর্ড (সরকারি পৃষ্ঠপোষণায় সম্পন্ন)।’’
ভাইপোর বিবাহ উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এখন কার্শিয়াঙে। পারিবারিক ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন তাঁর অপর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেক সেখানে গিয়েছেন স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে। পারিবারিক ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা উত্তরবঙ্গে বেশকিছু সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। ১২ ডিসেম্বর তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। অন্যদিকে, অভিষেকের কলকাতায় ফেরার কথা শুক্রবার। মমতার সফরের প্রথমদিন থেকেই শুভেন্দু ওই বিবাহের আয়োজন নিয়ে লাগাতার কটাক্ষ শুরু করেছেন। তারই প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণালের কাছে।
কুণাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো পরিবারের এক সদস্যের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন! এতে শুভেন্দু যে ভাবে বিয়ে-বিয়ে করে লাফাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ও নিজেই বিয়েপাগলা হয়ে গিয়েছে। সারা ক্ষণ একটা বিয়ে করি, বিয়ে করি ভাব।’’ সেখানেই থামেননি কুণাল। তিনি আরও বলেন, ‘‘অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডকে বলছি, ওর পরিবারের উচিত, শীতটা থাকতে বিয়ের বন্দোবস্ত করতে। এর পর গরম পড়ে গেলে ওর পাগলামিটা আরও বেড়ে যেতে পারে।’’
শুভেন্দুর প্রশ্ন ছিল, কেন মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক অনুষ্ঠানে সরকারি চিকিৎসকদলকে ব্যবহার করা হচ্ছে? কুণালের বক্তব্য, প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিৎসকদল রয়েছে। শুভেন্দুর এ-ও প্রশ্ন ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর প্রোটোকলের জন্যই যদি চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন, তাহলে সেই দলে শিশু বিশেষজ্ঞ কেন রয়েছেন?
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু কেন অকৃতদার, সে কথা তিনি একাধিক জনসভায় একাধিক বার বলেছেন। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, যে হেতু তিনি ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করেন, তা-ই মানুষের পরিবারটাই তাঁর পরিবার। বৃহত্তর পরিবার। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘পিছুটান যাতে তৈরি না হয়, সে জন্যেই অকৃতদার থেকেছি।’’ এ ব্যাপারে তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’ যে অবিভক্ত মেদিনীপুরের একাধিক স্বাধীনতাসংগ্রামী, সে কথাও আগে বলেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা। কিন্তু ‘ছাঁদনাতলার ঝগড়া’ আবার এত সবের ধার ধারে না। রাজনৈতিক আক্রমণের গন্ডি ছাড়িয়ে অনায়াসে ‘ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক’ হয়ে ওঠে!