Dead body recovered

পুলিশকর্মীর রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে মহিলার গোপন জবানবন্দি? কৃষ্ণনগর পুলিশের হাতে ‘শেষ চিঠি’

রবিবার সকালে থানার উল্টো দিকের দোতলা ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে সাব ইন্সপেক্টর গৌরগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘর থেকেই মিলেছে একটি সুইসাইড নোট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ১৭:৩৪
Share:

রবিবার সকালে থানার উল্টো দিকের দোতলা ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে সাব ইন্সপেক্টর গৌরগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ উদ্ধার হয়। প্রতীকী ছবি।

মামলাকারী মহিলা আদালতে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করে জবানবন্দি দিয়েছেন। যার জেরে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে। থানার আইসিরও ‘রোষের’ মুখে পড়েছেন। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা! নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ আধিকারিকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পাশাপাশি ঘর যে ‘সুইসাইড নোট’টি মিলেছে, তাতে অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়েছে বলে খবর তদন্তকারীদের সূত্রে। গোটা ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মৃতের স্ত্রী।

Advertisement

রবিবার সকালে থানার উল্টো দিকের দোতলা ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে সাব ইন্সপেক্টর গৌরগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘর থেকেই মিলেছে একটি সুইসাইড নোট। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ শিরোনামে লেখা ওই সুইসাইড নোটে লেখা হয়েছে, ‘‘আমি গৌরগোপাল গঙ্গোপাধ্যায় নাকাশিপাড়া থানার ২৬২/২৩ কেসের তদন্তকারী আধিকারিক। কেসের বাদিনী জয়শ্রী বোসকে কোনও দিন কোনও খারাপ কথা, বাজে মন্তব্য করিনি। গোপন জবানবন্দিতে মিথ্যে কথা বলে এসেছে। এই মিথ্যা কথা উকিল জয়ন্ত শিখিয়েছে। আমি জানি, খুব সহজেই নির্দোষ প্রমাণ হব। কিন্তু আমার সামাজিক মর্যাদা কে ফিরিয়ে দেবে? জয়শ্রী বোস খুব মিথ্যে কথা বলে। আমার নামে মিথ্যে বলে আইসি সাহেবকে দিয়ে ধমক খাইয়েছে। আমি নির্দোষ। আমার মৃত্যুর জন্য জয়শ্রী বোস আর জয়ন্ত উকিল দায়ী। নাকাশিপাড়া থানার আইসি না বুঝে আমাকে অপমান করেছে। ওই কারণে আমি মানসিক চাপ সহ্য করতে পারলাম না। আমি বিচার চাই।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাকাশিপাড়া থানা এলাকার উদয় চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়শ্রী বোস নামে এক মহিলা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্ত করছিলেন গৌর। পুলিশ সূত্রের দাবি, জয়শ্রী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গোপন গৌরের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তোলেন। সেই গোপন জবানবন্দির প্রতিলিপি থানায় পৌঁছলে শনিবার গৌরকে ভর্ৎসনা করেন আইসি। এর পর আইসির চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে যান গৌর। রবিবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

গৌর মুর্শিদাবাদের নওদা থানার আমতলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের আওতায় নাকাশিপাড়া থানায় সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মাস চারেক আগে ভীমপুর থানা থেকে বদলি হয়ে নাকাশিপাড়ায় যোগ দেন তিনি। তাঁর স্ত্রী আলপনা বলেন, ‘‘গতকাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শেষ বারের মতো কথা হয়েছিল। ছেলের আজ ইউপিএসসি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রস্তুতির খোঁজও নিয়ে ছিল। মানসিক চাপে আছে যে, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু সকালেই যে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি! আত্মহত্যার পিছনে নিঃসন্দেহে কোনও কারণ আছে। আমি এর তদন্ত চাই। দোষীদের শাস্তি চাই।’’

এই ঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায় বলেন, ‘‘সুইসাইড নোটটি পেয়েছি। সেটা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement