Daulatabad

ফোনে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন তরুণীকে

ঘটনাস্থলের দশ মিটারের মধ্যে দুটি বাড়ি রয়েছে। দুই বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, কেউ কোনও শব্দ পাননি। তাঁদের ধারণা অন্য কোথাও খুন করে এখানে মৃতদেহ ফেলে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:১৬
Share:

যেখানে মিলেছে দেহ। নিজস্ব চিত্র।

নিজের বাড়ির অদূরেই ঝোপঝাড় থেকে উদ্ধার হল এক তরুণীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার ভোরে দৌলতাবাদের হাজামপাড়ার ঘটনা। পরিবারের দাবি, বছর কুড়ির ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। মৃতের পরিবার থেকে পুরো ঘটনা পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানানো হলেও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় অভিযোগ হয়নি। তবে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘এদিন ভোরে কারও ফোন পেয়ে ওই তরুণী বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরে বাড়ির অদূরে ঝোপঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে কী না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাবা বছর খানেক আগে মারা গিয়েছেন। তিন বোনের মধ্যে বড় ওই তরুণীর মাস ছয়েক আগে রানিনগরের ডুবোপাড়ায় বিয়ে হয়েছে। বিয়ের জন্য স্থানীয়রা টাকা পয়সা তুলে তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করেছিলেন। মৃতার স্বামী মাসখানেক আগে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছেন। মা অসুস্থ হওয়ায় দিন কুড়ি আগে ওই তরুণী মায়ের বাড়ি হাজামপাড়ায় এসেছেন। ওই তরুণী ইসলামপুর কলেজে প্রথম বর্ষের পাশকোর্সের পড়ুয়া। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর পরীক্ষা থাকায় মায়ের কাছে থেকে গিয়েছিলেন। আর বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হল।

ঘটনাস্থলের দশ মিটারের মধ্যে দুটি বাড়ি রয়েছে। দুই বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, কেউ কোনও শব্দ পাননি। তাঁদের ধারণা অন্য কোথাও খুন করে এখানে মৃতদেহ ফেলে দিয়েছে। মৃতার হাতে পায়ে, গলায়, মুখে কালশিটের দাগ রয়েছে। গলায় চাদর প্যাঁচানো ছিল। যেখানে মৃতদেহ পড়েছিল তার দু’হাত দূরে ওই তরুণীর পায়জামা এবং একজোড়া চপ্পল পড়েছিল। এ ছাড়া যেখানে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় ৭০০মিটার দূরে একটি আম বাগান থেকে একজোড়া চপ্পল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুটি জায়গা পুলিশ দড়ি দিয়ে ঘিরে রেখেছে। তবে ওই তরুণীর ফোনের হদিশ পায়নি পুলিশ।

Advertisement

মৃতার বোন জানিয়েছে, বুধবার রাতে তাঁরা একই ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোর তিনটে নাগাদ উঠে দেখেন দিদি ফোন দেখছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে দেখে দিদি বলে, তোর দাদা (জামাইবাবু) বার বার ফোন করছে। কিন্তু নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে, ফোনে পাচ্ছে না। বাইরের দিকে যাচ্ছিল। আমি নিষেধ করতেই ঘরেই থেকে যায়। ফের কখন যে ঘর থেকে বেরিয়েছে বুঝতে পারিনি। সকাল হতেই মা আমাকে জানায় তোর দিদি ফোন করার জন্য বাইরে বেরিয়েছে। ওকে ডেকে নিয়ে আয়। এর পরে দিদির খোঁজে গিয়ে দেখি বাড়ির কাছে খেজুর গাছ সংলগ্ন একটি ঝোপঝাড়ের মধ্যে ওর অর্ধনগ্ন দেহ পড়ে আছে।’’

তাঁর দাবি, ‘‘পড়শি গ্রাম লালনগরের এক যুবকের সঙ্গে দিদির বিয়ের আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরে থেকে সে দিদিকে হুমকি দিত। আমাদের ধারণা লালনগরের ওই যুবক দিদিকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। ওর শাস্তি চাই।’’

মৃতার মা বলেন, ‘‘ফোনে কথা বলতে বলতে এদিন ভোরে বাড়ি থেকে ও বেরিয়েছিল। সকাল হয়ে গেলেও ফিরতে দেরি দেখে ছোট মেয়েকে খোঁজ নিতে পাঠায়। মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে আামদের খবর দেয়।’’ মৃতার শাশুড়ি অবশ্য জানান, ‘‘কীভাবে এসব হল জানি না। ঘটনার খবর পেয়ে ছেলে কেরল থেকে বিমানে করে বাড়ি ফিরছে। তবে এত ভোরে ছেলে বৌমাকে ফোন করেনি।’’

যে যুবকের দিকে অভিযোগের তির বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ উড়িয়ে ওই যুবকের মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে অসুস্থ। বুধবার সারা রাত বাড়িতেই ছিল। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement