লোকসভা ভোটের আগে মতুয়াদের উপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি প্রতিযোগিতা চরমে উঠেছিল। নদিয়ার জনসংখ্যার একটা বড় অংশই মতুয়া। ভোটব্যাঙ্কের নিরিখে তাঁদের প্রভূত গুরুত্ব। ফলে দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষে সেই ভোটব্যাঙ্ক নিজ-নিজ দিকে টানার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে।
ভোটে ভাল ফলের পর বিজেপি যখন জেলায় নিজেদের আরও শক্তিশালী করতে চাইছে ঠিক সেই সময় মতুয়া মহাসংঘকে ঢেলে সাজাতে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে এবং সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিজেপির চিকিৎসক-নেতা মুকুটমনি অধিকারী। এই মুকুটমণি লোকসভা ভোটে প্রথমে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে লড়তে পারেননি। তিনি মতুয়া মহাসংঘের কমিটির অন্যতম পদপ্রাপক হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে প্রভাববৃদ্ধির লড়াইয়ে বিজেপি অনেকটা এগিয়ে গেল বলে অনেকে মনে করছেন। এতে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির লাভ হতে পারে, এমন গুঞ্জনও রাজনৈতিক মহলে শোনা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত তাঁর বাবা গোপাল অধিকারী দীর্ঘদিন ধরেই মতুয়া সংগঠনের সদস্য। তিনি বর্তমানে সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি হয়েছেন। রবিবার চাকদহের শিলিন্দা বাজারে আয়োজিত সংগঠনের এক সভায় জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সদস্যেরা এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই নতুন কমিটির সদস্যাদের নাম ঘোষণা করতে গিয়ে মুকুটমনির নাম বলেন সংগঠনের সংঘাধিপতি তথা বনগাঁ লোকসভার সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তাঁর কথায়, “ জেলার যোগ্য নেতৃত্বকে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে মুকুটমনি অধিকারীকেও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আশা করছি, এই দায়িত্ব সে খুব ভালভাবে পালন করতে পারবে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।” তিনি বলেন, “রাজ্যে ৭৮টি বিধানসভা রয়েছে যেখানে মতুয়ারা প্রধান নিয়ন্ত্রক। মতুয়াদের উন্নতির জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিংহ-ও উপস্থিত ছিলেন।”
মুকুটমনি অধিকারী আবার বলেন, ‘‘ জেলার ৬২ শতাংশ তফসিলি জাতি-উপজাতির মধ্যে ৪৫-৫০ শতাংশই মতুয়া। এত দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে কিন্তু তাঁদের উন্নয়নের কথা ভাবেনি। বিজেপি সেটা ভাবছে তাই মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। এটা সত্যি যে, বিজেপির প্রভাব মতুয়াদের মধ্যে বাড়ছে।’’ যা শুনে জেলার তফসিলি জাতি-উপজাতি সেলের সভাপতি তথা কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মন্তব্য করেছেন, ‘‘তৃণমূল ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়াদের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছে। তাঁদের প্রতি কোনও বঞ্চনা হয়নি। মতুয়াদের মধ্যে আমাদের প্রভাব কমেনি, কমবেও না। আমাদের ভোটেরও কোনও পরিবর্তন হবে না।’’