(বাঁ দিকে) মায়ের সঙ্গে উৎপল সরকার। লাইনচ্যুত হাওড়া সিএসএমটি মুম্বই এক্সপ্রেস (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
মা ক্যানসার আক্রান্ত। দীর্ঘ দিন ধরে এই কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য মাঝে মধ্যেই তাঁকে নিয়ে মুম্বই যান নদিয়ার বাসিন্দা উৎপল সরকার। সোমবার রাতে হাওড়া থেকে চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে মুম্বই যাওয়ার জন্য হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেসে। মঙ্গলবার সকালে ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে সেই ট্রেনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নিজের আসন থেকে ছিটকে পড়েন উৎপলের মা। চোট পান মাথায় এবং কোমরে। দুর্ঘটনার সেই কয়েক মিনিটের সেই আতঙ্ক তাড়া করছে মা-ছেলেকে। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে ঘটনার মুহুর্তের ছবি।
নদিয়ার রানাঘাটের গাংনাপুরের বাসিন্দা উৎপল। পেশায় গাড়িচালক। ক্যানসার আক্রান্ত মাকে নিয়ে মুম্বইয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই ট্রেনই যে দুর্ঘটনার কবলে পড়বে ভাবতে পারেননি উৎপল। মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ট্রেনটি যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তখন ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি এবং তাঁর মা। জোরে ঝাঁকুনি, আসন থেকে ছিটকে পড়েন তাঁরা। উৎপল নিজে আঘাত পেলেও মাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দুর্ঘটনার ধাক্কা কিছুটা সামলে নিয়ে তিনি দেখেন, তাঁর বৃদ্ধা মায়ের মাথা এবং কোমরে চোট লেগেছে। তাঁকে নিয়ে কোনও রকমে ট্রেন থেকে নামেন উৎপল। খুঁজতে শুরু করেন কোথায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়।
দুর্ঘটনার সময় ঠিক কী হয়েছিল, তা-ও জানান উৎপল। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ একটা বিকট শব্দ। তীব্র ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙে। ট্রেনে মাঝের আসনে ছিল মা। সেখান থেকে ছিটকে পড়ে যায় মেঝেতে। আমার নিজে সামান্য চোট লাগলেও সে সব ভুলে মাকে কী করে কামরা থেকে বার করব সেটাই প্রধান ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’ জানা গিয়েছে, দু’জনের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ।
নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে নদিয়ার চার জন যাত্রীর খবর পাওয়া গিয়েছে। চার জনই মুম্বই যাচ্ছিলেন। প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জেলা প্রশাসন। তবে কারও চোট গুরুতর নয় বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মুম্বই মেল। এই ঘটনায় ওই এক্সপ্রেসের মোট ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। যার মধ্যে ১৬টি কামরাই ছিল যাত্রিবাহী। রেল দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন। তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন রেল কর্তৃপক্ষই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে সকলকে স্পেশ্যাল ট্রেনে চাপিয়ে চক্রধরপুর নিয়ে যাওয়া হয়।