উচ্ছেদ হওয়া দোকানিদের সাথে কথা বলছেন বিজেপির প্রতিনিধিরা, আছেন অর্জুন বিশ্বাস। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
চড়া সুদে টাকা নিয়ে মাস কয়েক আগে স্থানীয় নেতাদের থেকে দুটো দোকানের জন্য জায়গা ‘কিনেছিলেন’ নিরঞ্জন চক্রবর্তী। টাকার পরিমাণ নেহাত কম নয়, পাঁচ লক্ষ টাকা। শনিবার যন্ত্র চালিয়ে দুটো দোকানই ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। রোজগারের একমাত্র উৎস হারিয়ে নিরঞ্জনের প্রশ্ন, ‘‘এ বার কী করব বলতে পারেন? আমরা তো জায়গাটা জবরদখল করিনি। কিনেছি। তা হলে কেন আজ এ ভাবে পথে বসতে হবে?”
উচ্ছেদে নিরঞ্জনের মতো বিপদে পড়েছেন অনেক দোকানদার। তাঁদের দাবি, ফুটপাত হলেও স্থানীয়দের নেতাদের টাকা দিয়ে জায়গা ‘কিনতে’ হয়েছে। কেউ আবার পুরনো মালিকের থেকে দোকান কিনেছেন। শনিবার প্রশাসন বুলডোজার চালিয়ে ফুটপাত খালি করায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘আমাদের দোকান যাঁরা ভেঙে দিয়ে জায়গা ফাঁকা করছেন, তাঁদের কেউ দায়িত্ব নিয়ে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’
প্রশ্ন উঠছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে। উচ্ছেদ আইনত ঠিক কি না তা বিচারের আগে তাঁদের পাশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির উপস্থিতি আশা করেছিলেন সর্বস্বান্ত মানুষগুলো। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, শনিবার উচ্ছেদের সময় বিরোধী দলের কোনও নেতাকেই তাঁদের পাশে দাঁড়িতে দেখা যায়নি। যদিও রবিবার তাঁদের একাংশের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির নেতারা। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই আমরা এমন বেআইনি ভাবে উচ্ছেদ করতে দেব না। আমরা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছি। সোমবার থেকে রাস্তা নেমে প্রতিবাদ করা হবে।’’ সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদি বলেন, ‘‘এ ভাবে মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত আমরা মেনে নেব না। আমরা সর্বোচ্চ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সোমবার থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে। আইন মেনে এই উচ্ছেদ হচ্ছে না।’’
তবে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের রিতা দাস বলেন, ‘‘বিরোধীরা ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন যে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। সেই মতো জমি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।’’
উচ্ছেদ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে কৃষ্ণনাগরিকদের মধ্যে। কেউ কেউ রাস্তা পরিষ্কার হওয়ায় খুশি। তবে তাঁরা বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, এ ভাবে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মিলন সরকার বলেন, ‘‘এমনিতে বেকারত্ব চরমে। জীবিকার চরম সঙ্কট। সেই পরিস্থিতিতে শহর দখল মুক্ত করার নামে এত মানুষকে জীবিকাহীন করে দেওয়াটা ঠিক হল না।’’ বিশু বসাক নামে আর এক নাগরিক বলেন, ‘‘উচ্ছেদ আইন মেনে হচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে। যা ইচ্ছে, তা-ই করা যায় না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় এখনই ছেদ পড়ছে না। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, “আমরা চাই কোনও দোকান যেন ভাঙতে না হয়। মালিকেরাই যেন দোকান সরিয়ে নিয়ে ফুটপাত ফাঁকা করে দেন। তার জন্য সময়
দেওয়া হবে।”