প্রতীকী ছবি।
ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ক্রমশ বাড়ছে অনলাইন আবেদনের সংখ্যা। নির্বাচন কমিশন চাইছে, বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে অনলাইনে আবেদন করে। সেই মতো জেলা জুড়ে প্রচারও করা হয়েছিল। ভোটার তালিকা সংশোধন শুরুর পর থেকে দেখা যাচ্ছে, অনলাইনেই আবেদন বাড়ছে। জেলার কর্তাদের মতে, অনলাইনে আবেদনের সংখ্যা যত বাড়বে ততই কমবে ভুলত্রুটি। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ আরও নির্ভুল ও দ্রুত করা সম্ভব হবে।
গত ১৮ নভেম্বর নদিয়া জেলায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ। সেই মতো জেলায় ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেছেন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৭ জন। ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন ১ লক্ষ ১ হাজার ৭০ জন। আর নাম বিয়োজনের জন্য আবেদন করেছেন ২১ হাজার ২৮ জন। একই বিধানসভা এলাকার মধ্যে বুথ পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছেন ১৮ হাজার ৬৬৬ জন। এই সময় আবেদন জমা নেওয়ার জন্য প্রতিটা বুথেই বিশেষ শিবির করা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে প্রায় ৯১ হাজার ৮০০ জন অনলাইনে আবেদন করেছেন।
নদিয়া জেলায় লোকসভা ভোটের পর প্রায় এক লক্ষ ভোটার বেড়েছে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় জেলায় ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪০ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৩৫। ১৮ নভেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশের পর তা বেড়ে হয়েছে ৪১ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৬৫। চুড়ান্ত ভোটার তলিকায় সেই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। কারণ খসড়া তালিকা প্রকাশের পর সংশোধনের কাজ চলছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য মোট আবেদন জমা পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষ। আবার নাম বাদ দেওয়া বা বিয়োজনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ২১ হাজার। কর্তাদের ধারণা, সংযোজন ও বিয়োজন মিলিয়ে চুড়ান্ত তালিকায় আরও এক লক্ষের বেশি নাম বাড়তে পারে। জেলার নির্বাচন দফতরের এক কর্তা জানান, আবেদন জমা নেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন চলছে শুনানির কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তালিকা সংশোধন সেরে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা যাবে বলে তাঁদের আশা।
তবে একই সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন ও ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের কাজ চলায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকে। কারণ দুটো কাজই করতে হচ্ছে ব্লক স্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের। তাঁরা দু’দিক সামাল দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এবং এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’-এর কাজকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হচ্ছে বলে কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। তাতেই কিছুটা ভাটা পড়ছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে। যদিও তা মানতে নারাজ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, কোনও ভাবেই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে ঢিলেমি করা সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচন কমিশন প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে কাজ তুলতে না পারলে কমিশনের রোষে পড়তে হবে।
প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য জেলা থেকে শুরু করে ব্লক স্তর পর্যন্ত কর্মী ও আধিকারিকদের আলাদা টিম তৈরি করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির সম্পর্ক নেই। জেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন আধিকারিক গোবিন্দ হালদারের বক্তব্য, “দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য ভোটার তালিকা সংশোধনে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করতে পারছি। আশা করছি, নির্ভুল ভাবেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারব।”