পরিবার হারিয়ে শোকস্তব্ধ কৃষ্ণা রায়। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। শুক্রবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ
মর্গের নিস্তব্ধ পরিবেশ ফালাফালা হয়ে গেল মহিলার আর্ত বিলাপে। দু’জনের কাঁধে ভর দিয়ে কোনওরকমে এগিয়ে আসছেন তিনি।
এক দিন আগে পর্যন্ত তাঁর ছিল ভরন্ত সংসার। কিন্তু শুক্রবার সকালে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার সোনাডাঙা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামী ও দুই শিশু সন্তানের। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন তাঁর শাশুড়ি এবং মামা শ্বশুরও। গোটা পরিবারে একমাত্র তিনিই বেঁচে রয়েছেন। এই বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর থেকেও ভয়ঙ্কর। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা কৃষ্ণা রায়।
এ দিন মর্গের দেওয়ালে আছড়ে পড়ে চিৎকার করে তিনি বলে ওঠেন, “আমি বিশ্বাস করি না। তোমরা সবাই মিথ্যে বলছ। এ ভাবে আমাকে না নিয়ে ওরা কোথাও যেতে পারে না। ওরা জানে যে, আমি ওদের ছেড়ে থাকতে পারব না।”
পরিজনেরা জানালেন, বৃহস্পতিবার নিজের হাতে দুই সন্তান আর স্বামীর জামাকাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ছোট ছেলে বলেছিল, “মা তুমিও চল আমাদের সঙ্গে।” কৃষ্ণা থেকে গিয়েছিলেন। না হলে বাড়িটা ফাঁকা পড়ে থাকবে। মর্গের সামনে বসে ক্রমাগত আর্তনাদ করছিলেন, “সারা জীবনের মতো বাড়ি ফাঁকা করে দিয়ে সবাই চলে গেলে। কেন আমি তোমাদের সঙ্গে গেলাম না? তা হলে আমাকে এ ভাবে বেঁচে থাকতে হত না।” মর্গে তাঁকে ঘিরে ছিলেন পরিজনেরা। একটা সময় তাঁর কান্না বন্ধ হয়ে যায়। নিজের মনে বিলাপ করতে থাকেন। তার পর অজ্ঞান হয়ে যান। মর্গ থেকে যখন একের পর এক মৃতদেহ বের হচ্ছে তখন এক বার কৃষ্ণা ছিটকে ছিটকে ওঠেন। তার পর পাথরের মতো নিথর হয়ে যান।