সারাদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টি। তারই মধ্যে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরা। শনিবার রানাঘাটে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
বেশ অনেক দিন পর আনাজের দাম নিম্নমুখী। কিন্তু রসনা সুখের এই বাজারে ফের দুর্যোগের ঘনঘটা। দুয়ারে ঝাঁপটাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি হয়েছে দেশময়। শনি ও রবিবার রাজ্যের উপকূলবর্তী এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ডজনখানেক জেলা প্রবল ঝড়বৃষ্টির সম্ভবনা নিশ্চিত করেছে হাওয়া অফিস। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষি এবং ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ বর্ষার জের সামলে সবে চাষাবাদে জোয়ার আসতে শুরু করেছে। দেরিতে হলেও মাঠে এখন ফসলে ছয়লাপ। মরশুমি আনাজ ছাড়াও জমিতে রয়েছে তৈলবীজ, ডালশস্য। নানারকম শাক। আমন কাটার প্রায় শেষ জমিতে বোনা হচ্ছে নতুন আলু। এই ভরা মরশুমে আচমকা ঝড়বৃষ্টি বড়সড় রকম ছন্দপতন ঘটাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে সকলে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যি যদি পূর্বাভাস অনুযায়ী জোরালো ঝাপটা দেয় জাওয়াদ, তা হলে আনাজের দাম যে ভাব কমতে শুরু করেছে তা খানিক মন্থর হতে পারে।
রুইপুকুরের আনাজ চাষি অনিল মণ্ডল বলেন, “এখন সব মাঠেই ফসল আছে। ঝড়বৃষ্টি না-হলে আরও ফসল ওঠার কথা এই সময়। তবে যদি বৃষ্টি বেশি হয়ে জমিতে জল জমে যায় তা হলে বহু আনাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এ বারের শীতে আর সে ফসল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারব কি না জানি না।” করিমপুরের শঙ্কর মণ্ডল জানাচ্ছেন “ঝড় জোরালো হলে বেশি ক্ষতি হবে সর্ষের। কেন না এখন গাছে ফুল আসার সময়। ডালশস্যের মধ্যে মুসুরির ওপর প্রভাব পড়বে। যে কোনও ফসলে ফুল আসার সময় বৃষ্টি হলে পরাগ সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃষ্টির পর মাটি শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাবে। তখন জমির কোনও ফসলই ভাল ভাবে বাড়বে না। ক্ষতি হবে
কলা চাষেও।”
চাষিদের এই আশঙ্কা অন্য ভাবে ভাবাচ্ছে বিক্রেতাদের। সবে নরম হয়ে আসা বাজারদর এই দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে চড়িয়ে দিতে পারে মুনাফা সন্ধানী ফড়ে বা মহাজনের দল। সকলেই মানছেন আনাজের দাম যে ভাবে কমছে, মারাত্মক বৃষ্টি হলে সেই ‘দাম কমা’ খানিক মন্থর হতে পারে।
সরকারি কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “একের পর এক নিম্নচাপের জেরে চাষি সময় মতো চাষ করতে পারেননি। আবার নিম্নচাপ ফের চাষিকে পিছিয়ে দেবে। তা ছাড়া শীতকালীন আনাজ বৃষ্টি পেলে ছত্রাকঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। তাই উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।”