ধরমপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
আঙুলটা উঠেছিল নয়া নাগরিকত্ব আইনের দিকে। প্রতিবাদের সেই আঁচ থিতিয়ে এলেও তার আতঙ্কের ছায়া উস্কে দিয়েছে অন্য ক্ষোভ। যার জেরে গাঁ-গঞ্জে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে কোথাও ঘেরাও হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথাও বা ঘাড় ধাক্কা খাচ্ছেন রেশন ডিলার।
মুর্শিদাবাদের নওদা থেকে হরিহরপাড়া, ধরমপুর কিংবা ডাহাপাড়া— গত দু’দিন ধরে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে আশা কর্মীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে টিকাকরণ প্রকল্প, স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গিয়ে পরিবারে সদস্য সংখ্যা জানতে চাইলে খেটো বাঁশ হাতে তাঁদের তাড়িয়ে ছাড়ছেন গ্রামবাসীরা। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ‘‘ভয় পেয়ে সবেই এনআরসি’র জুজু দেখছেন গ্রামবাসী!’’ তথ্যের খোঁজে তাই গ্রামে যাওয়ার কথা শুনলেই পা কাঁপছে কর্মীদের।
নওদা, হরিহরপাড়ার সেই ক্ষোভের স্রোত এ দিন ধেয়ে এল ধরমপুর গ্রামে। শনিবার সকালে ধরমপুর গ্রামে একাধিক এনজিও কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন উত্তেজিত জনতা। যার আঁচ ছড়াল পড়শি লোচনমাটি, ডাঙাপাড়া, কুমরিপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামে। ধরমুপুরে থাকেন একাধিক এনজিও কর্মী, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। গ্রামে ঘুরে তাঁরাই সংগ্রহ করেন সরকারি প্রকল্পের তথ্য।
এ দিন সেই সব কর্মীদের বাড়ি ঘিরে আচমকাই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীদের একাংশ। ভয় পেয়ে কেউ খিড়কি দুয়ার দিয়ে বাড়ি ছাড়েন কেউ বা ঘরে খিল এঁটে আতঙ্কে জানলা দিয়ে দেখেন ভাঙচুর চলছে বাড়ির উঠোনে।
শুক্রবার হরিহরপাড়ার মামুদপুর গ্রামে এক স্বাস্থ্যকর্মীকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান উত্তেজিত জনতা। ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই কর্মী। ক্ষিপ্ত জনতা এর পরে স্থানীয় এক রেশন ডিলারের বাড়িতেও বিক্ষোভ দেখান। নওদার ত্রিমোহিনী, ভোলা, কানাপাড়া গ্রামেও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি ঘিরে চলে একের পর এক বিক্ষোভ।
শনিবার সকালে হরিহরপাড়ার ধরমপুর গ্রামে জেসমিনা খাতুন নামে এক এনজিও কর্মীর বাড়িতে চড়াও হন গ্রামবাসীদের একাংশ। বিক্ষোভ ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে ধরমপুর, আব্দুলপুর, রমনা গ্রামে। দরজা খুলে ‘কেন, কী দোষ করলাম?’ প্রশ্ন করতেই প্রায় মারমুখী হয়ে ওঠে জনতা। ভাঙচুরও চালানো হয় ওই এনজিও কর্মীর বাড়িতে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘‘জেসমিনা খাতুন ও তার বোন রাকিবা গ্রামে গ্রামে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে কেন? কেনই বা ছবি তুলছে সকলের, এর পিছনে নিশ্চয় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে!’’
এই অবুঝ জনতাকে তথ্য সংগ্রহের কারণ বোঝাতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনের কর্তাদের। ঘটনাস্থলে পৌছে হরিহরপাড়া পুলিশ দেখে, বাড়ি ছেড়ে প্রাণে বেঁচেছেন জেসমিনা খাতুনের পরিবার। মশাবাহিত রোগের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর সদস্য লোচনমাটি গ্রামের মাহফুজা বিবি। শনিবার তাঁর বাড়িতে চড়াও হন গ্রামবাসীরা। সময় মতো সেখানেও পুলিশ না পৌঁছলে অপ্রীতিকর কিছু হতে পারত বলে মনে করছেন মাহফুজা। ডাঙাপাড়ার জাকিরন বিবি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী। তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে গ্রামবাসীদের দাবি ছিল— ‘কেন গোষ্ঠীর মহিলারা এমন তথ্য নিচ্ছে জানাতে হবে!’