চুলদানের আগে ও পরে সোমাশা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের পরচুলা বানানোর জন্য নিজের চুল দান করলেন উনিশ বছর বয়সী কলেজ ছাত্রী সোমাশা মণ্ডল। বেলঘরিয়া ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর বাড়ি করিমপুরের পাট্টাবুকায়। সোমাশা ক্যানসার রোগীদের জন্য নিজের চুলদানের বিষয়টি ছবি-সহ ফেসবুকে পোস্ট করেন। তা পরেই সেটি ভাইরাল হয়।
রবিবার তিনি পুরো মাথা নেড়া করে তাঁর চুল সংগ্রহ করেন। সেটিকে যথাযথ ভাবে প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ে সোমবার পাঠিয়ে দিয়েছে মুম্বইয়ের একটি সংস্থার ঠিকানায়। যে সংস্থা এই দান করা চুল দিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরচুলা বা ‘উইগ’ বানিয়ে থাকে।
সোমাশা জানাচ্ছেন, গত পঁচিশ দিন আগে গ্রামের বাড়ি পাট্টাবুকায় থাকার সময়ে তিনি ফেসবুক থেকেই জানতে পারেন, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপির সময়ে চুল উঠে যায়। পরবর্তী কালে তাঁরা অন্যের দান করা চুল থেকে তৈরি উইগ ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেউ চুল দান করতে চাইলে অন্তত বারো ইঞ্চি লম্বা চুল পাঠাতে হয়।
এর পরেই তিনি চুল দানের কথা স্থির করেন। সেই মাফিক মাথা নেড়া করার কথা বাড়িতে বাবা-মাকে জানান। বাড়ি থেকে বেলঘরিয়ার মেস-এ ফিরে রবিবার সোমাশা ১২ ইঞ্চি চুল দান করতে নেড়া হন।
সোমাশার কথায়, “ফেসবুকেই দেখেছিলাম রায়গঞ্জের ঋতিকা ও অন্য এক জন মেয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে এ ভাবে চুল দান করেছেন। অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও নেড়া হব ঠিক করে ফেলি। আমার এই সিদ্ধান্তে বাবা-মা অবাক হয়েছিল। কলকাতায় ফিরে চুল কেটে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’
তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁকে দেখে সোমবার বর্ণালী দাশগুপ্ত চুল দান করেছে। সোমাশার আশা, ‘‘আমি চাইব, আগামি দিনে আরও অনেকে এই চুল দানের কাজে এগিয়ে আসুন।”
পাট্টাবুকার বাড়িতে সোমাশার মা সরস্বতী মণ্ডল বলেন, “এ বার বাড়িতে এসে মাথা নেড়া করার কথা বলেছিল। পাড়ায় অনেককে মেয়ে এ-ও বলেছিল যে, ক্যানসার রোগীদের দিলে ওই চুল তাঁদের কাজে লাগে। কিন্তু সত্যি সত্যি যে মেয়ে এ কাজ করবে, বুঝিনি।’’
তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন গ্রামের কেউ কেউ সোমাশার সাহসের প্রশংসা করলেও অনেকেই আবার সমালোচনা করছেন।
সোমাশার প্রতিবেশী মুক্তি ভট্টাচার্য জানান, সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে এসেও সোমাশা পাড়ার সবাইকে চুল দান করার বিষয়ে জানিয়েছিলেন।
যদিও সোমাশার বাবা ভদ্রেশ্বর মণ্ডলের দাবি, “মেয়ের মাথার চুল উঠে যাচ্ছিল। মাথা ফাঁকা হয়ে টাক পড়ে যাচ্ছিল। তাই চুল কেটে মাথা নেড়া করেছে।”