রঘুনাথগঞ্জের রবীন্দ্র ভবনে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় ফিরহাদ হাকিম। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
লোকসভা ভোটে সিপিএম এবং কংগ্রেস হাত মেলানোয় এ রাজ্যে তাদের ভরাডুবি হয়েছে বলে দাবি করলেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম (ববি)। সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর এবং বেলডাঙায় ২১ জুলাইয়ের দু’টি প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে গিয়ে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন।
এ দিন প্রথমে জঙ্গিপুরে সভা ছিল ফিরহাদের। সেখানে বাম ও কংগ্রেসকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে লাইন দিয়ে ছাপ্পা ভোট করাত সিপিএম। বরকত গনি খান বলতেন, সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ফেলতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করে দেখিয়েছেন। ৫০, ২৫৩ জন কংগ্রেস কর্মীকে খুন করেছে সিপিএম। মুর্শিদাবাদ জেলায় ৭৮০ জন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন সিপিএমের আমলে। সেই কংগ্রেস এ রাজ্যে সিপিএমকে আবার তুলে ধরার চেষ্টা করছে।” বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে পাঁচ বারের সাংসদ অধীর চৌধুরীক হারের প্রসঙ্গ তুলে ফিরহাদে কটাক্ষ, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে বামের হাত মেলানোই কাল হয়েছে। অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিম হাত মিলিয়েছেন। তাঁরা ভোটে হেরেছেন।’’ তবে ফিরহাদের মন্তব্য নিয়ে সিপিএম নেতা সোমনাথ সিংহায় বলেন, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন। দুর্নীতিরাজ চলছে। রাজ্যবাসীর স্বার্থে কংগ্রেস ও সিপিএম অতীত ভুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল জন্মের পর থেকে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করে বহু নির্বাচনে লড়েছে। এখন বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাত গোপনে হচ্ছে। সিপিএম ইন্ডিয়া জোটের শরিক। তাহলে তৃণমূলেরও উচিত ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। ফিরহাদ হাকিম কী বললেন, তাতে কংগ্রেসের কিছু এসে যায় না।’’
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার কথা ফের মনে করিয়ে দেন ফিরহাদ। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন এবং প্রয়াত নেতা পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেন তিনি। দলের সাংসদ সৌগত রায় এবং আরেক নেতা মদন মিত্রের ভূমিকার কথাও বলেন তিনি। জেলার তিনটি লোকসভা আসনে তৃণমূলকে জেতানোয় ভোটারদের ধন্যবাদ জানান ববি। বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘ওদের দম্ভ দূর হয়েছে। বিজেপি ডুবন্ত নৌকো।’’ মন্ত্রী তথা জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক ফিরহাদকে কাছে পেয়ে তাঁর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক তৃণমূল নেতাই।
সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা তৃণমূলকে দেখেননি, জেলা নেতাদের বলব, তাঁদের মার্ক করুন।” শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা দলের বিরুদ্ধে ভোট করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিক।’’ ২১ জুলাইয়ে কলকাতায় গিয়ে কর্মীরা যেন সভাতেই উপস্থিত থাকেন, তা নিশ্চিত কার কথাও মনে করান কেউ কেউ। জঙ্গিপুরের তৃণমূল চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের কেউ ভুল করলে তা সংশোধন করতে হবে।’’ জঙ্গিপুরের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান জানান, দলে যে সব অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়া হবে ২১ জুলাইয়ে সভার পরে।