উদ্ধার হওয়া কচ্ছপ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
যথারীতি শীতের মরসুমে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে লুকিয়ে-চুরিয়ে শুরু হয়েছে কচ্ছপ বিক্রি। পাচার চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শুক্রবার রাতে একটি ছোট ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কচ্ছপ ‘পাচারের’ সময় গাইঘাটার কুলপুকুর এলাকায় যশোর রোড থেকে ৩৯৬টি জ্যান্ত কচ্ছপ উদ্ধার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রদীপ হালদার এবং কুণাল সাহা নামে দুই যুবককে। প্রদীপের বাড়ি নিমতায়, কুণালের ডানলপে।
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা বাংলাদেশে কচ্ছপ পাচার চক্রে জড়িত। শুক্রবার রাতে ‘নাকা’ তল্লাশির সময় বনগাঁ সীমান্তমুখী ওই গাড়িটিকে ধরা হয়। ১৯টি ট্রে-তে কচ্ছপগুলি ছিল।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বনাধিকারিক অভিজিৎ কর বলেন, ‘‘বছরভর আমরা বেআইনি ভাবে কচ্ছপ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। শীতে বিক্রি বাড়ে। এই সময়ে দফতরের পক্ষ থেকে বাজারগুলিতে আরও বেশি নজরদারি চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়।’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়িশা হয়ে এই জেলায় কচ্ছপ পৌঁছয়। দিন দশেক আগেও বাগদার হেলেঞ্চা বাজারে প্রকাশ্যে কচ্ছপ বিক্রি হচ্ছিল। পাচারকারীরা পুলিশ এবং বন দফতরের কর্তাদের চোখে ধুলো দিতে মূলত ম্যাটাডর বা ট্রাকে মাছ ভর্তি ট্রে’র নীচে কচ্ছপ আনে। সেই সব গাড়ি চলে আসে উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বিভিন্ন বাজার এলাকায়। কয়েক বছর আগে গাইঘাটার বিষ্ণুপুর থেকে এমনই একটি কচ্ছপ ভর্তি ম্যাটাডর আটক করে সিআইডি। তারপরই বিষয়টি সামনে আসে। এ ছাড়াও, মাছের পরিবর্তে পশুখাদ্য বা অন্যান্য জিনিসপত্রের আড়ালে কচ্ছপ আনা হয়।
বন দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, কর্মীর অভাব থাকায় সব ক্ষেত্রে কচ্ছপ বিক্রি বা পাচার ঠেকানো যায় না। তা ছাড়া আগে থেকে জানা না থাকলে বোঝা সম্ভব নয়, মাছ ভর্তি ট্রে’র নীচে কচ্ছপ আনা হচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন, এক শ্রেণির মানুষের কাছে কচ্ছপের মাংসের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কচ্ছপ বিক্রি বা কেনা সম্পূর্ণ বেআইনি জেনেও মানুষ তা বাজারে গিয়ে কিনছেন। এ বিষয়ে সচেতনতা না এলে বিক্রি পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না।