শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল চিকিৎসকের। সাধীনপুর স্টেশনের রবিবার গভীর রাতের ঘটনা। রেল পুলিশ জানাচ্ছে, মৃতের নাম প্রদীপ দত্ত (৪২)। বাড়ি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের শিমলা গ্রামে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেমনস্ট্রেটর পদে যুক্ত থাকার জন্য বর্ধমান শহরের ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী এবং দু’বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকতেন প্রদীপবাবু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে হিয়াতনগর মোড়ের চেম্বার সেরে বর্ধমানে বাড়ি ফিরছিলেন। হিয়াতনগর মোড়ের যে ওষুধের দোকানে প্রদীপবাবু চেম্বার করতেন, সেই দোকানের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘রাত সাড়ে দশটা নাগাদ গয়া-রামপুরহাট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ডাক্তারবাবুকে চাপিয়ে দিয়েছিলাম। গভীর রাতে জানতে পারি দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাশিম নগর গ্রামের ওসেকুর রহমান বলেন, ‘‘ট্রেন ঘণ্টাখানেক সাধীনপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত বারোটা দশ নাগাদ স্টেশনে ঘোষণা হয়, শিয়ালদহগামী গৌড় এক্সপ্রেস যাবে। আমি এবং কয়েক জন যাত্রী প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছিলাম। ট্রেনটি ধীর গতিতে যাচ্ছে দেখে চলন্ত ট্রেনে চাপার চেষ্টা করি। কর্তব্যরত রেলপুলিশ উঠতে দেয়নি। এর পরে যখন ট্রেনটির পিছনের দিকে সাধারণ কামরা আসে তখন ট্রেনের গতি বেড়ে গিয়েছে। ওই অবস্থায় দেখি এক জন চাপতে গিয়ে পা পিছলে প্লাটফর্মের নীচে লাইনের ধারে পড়ে গেলেন।’’
সঙ্গে সঙ্গেই স্টেশনে কর্তব্যরত রেল পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। রেল পুলিশ আসার আগে কয়েক জন মিলে প্রদীপবাবুকে রেললাইন থেকে তোলেন। পরের স্টেশনই রামপুরহাট, তাঁকে গয়া-রামপুরহাট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চাপানো হয়। তার পরে রামপুরহাট রেল পুলিশের তত্ত্বাবধানে প্রদীপবাবুকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান মারা গিয়েছেন তিনি।
সোমবার সকালে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাদা সন্দীপ দত্ত বলেন, ‘‘রাতেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছিলাম। সব শেষ হয়ে গেল।’’
‘সব শেষের’ হাহাকার সিমলা গ্রামেও। শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সিমলা গ্রামে আদি বাড়ি হলেও বেশ কিছু দিন আগেই মাইল ছয়েক দূরে বানীপুরে বাড়ি করে চলে আসেন বাবা সহদেব মন্ডল। বাড়িতে রয়েছেন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ বাবা, মা এবং এক ভাই সুদীপ্ত। বানীপুরের পাশেই সুদীপ্তের মুদির দোকান। সিমলার সম্ভ্রান্ত মন্ডল পরিবার। প্রদীপ অবশ্য পদবী বদলে ‘দত্ত’ হন। প্রদীপবাদুর বিয়ে হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে আন্দুলে।