বহরমপুরে ত্রাণের লাইন।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ মুর্শিদাবাদে আসতে পারে—এমন খবর পেয়ে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বুধবার বিকেলেই অনেক মানুষকে সরিয়ে এনে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছিল। জেলা জুড়ে খোলা হয়েছিল ১২৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই বৃহস্পতিবার ত্রাণ শিবির বন্ধ করে বাসিন্দাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের হাতে ত্রিপল, শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে মুর্শিদাবাদের আকাশ পরিষ্কার ছিল।
অন্যদিকে শুক্রবার রাজ্যের সেচ দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল জঙ্গিপুরে সেচ দফতরের অফিসে সেচ দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে বর্ষার আগেই গঙ্গা-পদ্মা পাড় সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর শুধুমাত্র জঙ্গিপুর মহকুমায় গঙ্গা-পদ্মার ৭০টি জায়গার বাঁধ সংস্কারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। সভাধিপতি বলেন, ‘‘মাঠে নেমে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে এদিন সেচ মন্ত্রীর নির্দেশ মতো জঙ্গিপুরে সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বর্ষার আগেই বাঁধ মেরামতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘বুধবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় মূলত কৃষির ক্ষতি বেশি হয়েছে। সে সবের মাঠে নেমে রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।’’
তবে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপানে’ মুর্শিদাবাদে ক্ষতির পরিমাণ বাড়াল। শুক্রবার প্রশাসন জানিয়েছে, ঘরবাড়ি, কৃষি ও অন্য সরকারি সম্পত্তি মিলিয়ে জেলায় ১ হাজার ১৬২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩০০টি সম্পূর্ণ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে শুক্রবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২২টি। বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছিল ৪৬৫০টি, শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৮৫টি। শুক্রবার জেলা প্রায় ৫ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে।
জেলার ২৬টি ব্লকের ১৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১১৫৭টি গ্রামে ঝড়ের প্রভাব পড়েছে। জেলার ৫টি পুরসভার ৯৭টি ওয়ার্ডেও প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে জেলার প্রায় ৫লক্ষ মানুষ ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫০০ হেক্টর ফসল এবং ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর ফলের বাগানে আমপানের প্রভাব পড়েছে।