সুবোধ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের তৃতীয় দফা শুরু হওয়ার পর শর্তসাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সেলুন খোলার অনুমতি মেলেনি। তাতেই চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া হয়েছে বেলডাঙার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুবোধ প্রামাণিকের।
করোনার সংক্রমণ দেশে শুরু হওয়ার পর দেশজুড়ে ডাকা লকডাউন দেড় মাস হতে চলল। গত দেড় মাস ধরে আরও অনেক দোকানের মতো বন্ধ সুবোধের সেলুনও। প্রতিবারই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ছে। ফলে রোজগারহীন হয়ে থাকারও মেয়াদও বাড়ছে তাঁর। এ নিয়েই সমস্যায় পড়েছেন তিনি। সুবোধ মঙ্গলবার বলেন, “টানা দেড় মাস ধরে সেলুন বন্ধ। আমার আর কোনও বিকল্প আয় নেই। গত কয়েক দিন ধরে সরকারি চাল-ডাল খেয়ে চলেছে। এ বার সামান্য জমানো টাকাতেও হাত পড়েছে। এভাবে কতদিন চলবে জা নিনা। তবে লকডাউন দ্রুত না উঠলে আমি মাঠে মারা যাব।’’সুবোধ জানালেন, তাঁরা কয়েক পুরুষ ধরে এই পেশায়। তিনিও প্রায় ৩৭ বছর ধরে চুল-দাড়ি কাটার কাজ করছেন। টানা এতদিন সেলুন বন্ধ তাঁর কখনও করতে হয়নি। এমন দিন যে আসতে পারে, সেটাও তাঁর কল্পনারও অতীত ছিল এতদিন। তবে করোনা-ভয় এবং লকডাউনই তাঁকে রূঢ় বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুবোধের ছোট সংসার। স্ত্রী-ছেলে এবং তিনি। তবে ছোট সংসার হলেও প্রতি মাসেই একটা বড় টাকা স্ত্রীর ওষুধ কিনতে খরচ হয়ে যায়। সুবোধের কথায়, ‘‘ছেলে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। ওর পড়াশোনার পিছনে খরচ তো আছেই। পাশাপাশি আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুখে ভুগছে। আমিও স্পন্ডিলোসিসের সমস্যায় একেবারে কাবু হয়ে পড়েছি। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। ফিজিওথেরাপির জন্য খরচ আছে। সঞ্চয় ভেঙেই এখন চলছে। তবে কতদিন এভাবে টানতে পারব, জানি না।’’ রেশনে ছ’ কেজি চাল এবং চার কেজি আটা পেয়েছিলেন কয়েক দিন আগে। আর কোনও সাহায্য মেলেনি। সুবোধ বলেন, “শুনছি গ্রিন জ়োনে সেলুন খুলবে শীঘ্রই। আমাদের জেলা অরেঞ্জ জ়োনের আওতায়। সেলুন এখনই খুলবে না। কীভাবে সংসার চলবে, ওষুধ কিনব কী করে, সেই ভেবেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।’’