নিজস্ব চিত্র
অদৃশ্য করোনাভাইরাসের জেরে মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক দূরত্ব বাড়লেও নিবিড় হচ্ছে সহমর্মিতার বোধ। চৈতন্য এবং চাঁদকাজির শহর নবদ্বীপে এই অসময়েও মিলল তার অনন্য নজির।
শুক্রবার বিকালে নবদ্বীপ তেঘড়ি পাড়ার জুম্মা মসজিদ থেকে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হল শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকানগর শীতলা মন্দির এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে। বহু পুরনো ওই মন্দিরের সামনে থেকে জুম্মা মসজিদের প্রতিনিধিরা স্থানীয় অসহায়, গরিব মানুষদের হাতে তুলে দিলেন চাল, আলু, মুড়ি, সয়াবিনের মতো খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে হাত ধোয়ার সাবান ইত্যাদি।
একমাস ধরে লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষজন। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের উপার্জন বন্ধ। চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তেমনই কিছু অসহায় মানুষের হাতে এ দিন জুম্মা মসজিদ থেকে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে মসজিদের তরফে মহম্মদ সালাম শেখ বলেন, “বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারির আকার নিয়েছে। মানুষের কাছে এ এক বড় দুঃসময়। ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছেন না যে সব মানুষ, তাঁদের কাছে কিছু খাদ্য পৌঁছে দিতে এসেছি আমরা।’’ তাঁর বিশ্বাস, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে একসঙ্গে লড়াই করলে করোনাকে রোখা সম্ভব।
কিছু দিন আগে একই ভাবে সম্প্রীতির নজির গড়েছিল চৈতন্যদেবের নবদ্বীপ। শহরের অন্যতম প্রাচীন মন্দির চিন্তামণি কুঞ্জের তরফে নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছিল অন্য ভাবে। নতুন বছরে মন্দির থেকে মসজিদে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। সে দিন মুসলিম সম্প্রদায়ের অসহায়, নিরন্ন মানুষের জন্য ত্রাণ গিয়ে পৌঁছেছিল মসজিদে। নবদ্বীপ বউবাজার বড়পাঠক বাড়ির চিন্তামনি কুঞ্জ থেকে তেঘড়িপাড়ার ইদিলপুর মসজিদের ষাট জন দুঃস্থ অসহায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছিলেন মন্দির প্রধান কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী। সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয়।
শুক্রবার মসজিদে তরফে ত্রাণ বিতরণের সময়েও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীকে। তিনি বলেন “লকডাউনে ঘরবন্দি সব মানুষের রুটিরুজিতে টান পড়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে জাতি ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে এই ভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে। নবদ্বীপের নিজস্ব সংস্কৃতি আরও একবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।” এ দিন তিনি মসজিদের প্রতিনিধিদের হাতে ইফতারের জন্য খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন।