বাড়তে বসে থাকতে হচ্ছে। চোখ কার্টুনে। নিজস্ব চিত্র
দুই মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে বাড়িতে কেবল টিভি’র সংযোগকেটে দিয়েছিলেন বহরমপুরের রহিমা বিবি। কিন্তু লকডাউনের জেরে স্কুল, টিউশন, নিদেনপক্ষে সামনের পার্কে দাপাদাপি করতে যাওয়ার সুযোগটুকুও বন্ধ। ঘরবন্দি দুই মেয়ে আফরিন ও আঞ্জুমের তাই ভারী মনখারাপ। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান। বাধ্য হয়ে একদা ‘কঠোর’ মা ফিরিয়ে এনেছেন টিভি’র কানেকশন। রহিমা বলছেন, ‘‘আমার এক মেয়ে তৃতীয় অন্য মেয়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। লকডাউনের আগে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকটা সময় দিয়ে ফেলছিল টিভিতে। বাধ্য হয়ে কেবল কানেশকটাই ছেঁটে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন, লকডাউনের ধাক্কায় যা অবস্থা দাঁড়ালো, মেয়ে দু’টোকে ঘরে বেঁধে রাখতে ও ছাড়া আর উপায় কী!’’
সাধারণ মায়ের পাশাপাশি, ঘরে বেঁধে রাখার এই উদ্বেগের কথা শুনিয়েছেন মনোবিদেরাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দুরন্ত বাচ্চা ঘরের মধ্যে ঘ্যানঘ্যান করার পাশাপাশি কারও বা কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক আচরণও নজর এড়াচ্ছে না। স্কুলে না যেতে চাওয়া বাচ্চা এখন স্কুলে যাওয়ার বায়না করছে যেমন, তেমনই শান্ত শিশুর ছাদের পাঁচিলে অত্যধিক দুরন্তপনাও কপালে ভাঁজ ফেলেছে বাবা-মা’র।
শহরের এক পরিচিত শিশু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে শিশুরা সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে। অনেকের ব্যবহারেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একটা নির্দিষ্ট চৌহদ্দির মধ্যে দিন-রাতের হিসেব করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। যে সময়ে সে বাইরে থাকত সেই সময়টুকু বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’ বহরমপুরের মনোবিদ সুমন্তকুমার সাহা বলেন, ‘‘ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় ঘরে বসেই তাদের সঙ্গে নানাভাবে সময় কাটানোর উপায় বের করতে হবে মা-বাবাকেই। যেমন তার পছন্দের নাচ-গান-গল্প বলা এগুলো এখন করতেই হবে।’’
বহরমপুরের মধুপুরের সঞ্জীব সোমের তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সোনাক্ষী বাঁধাধরা রুটিনে স্কুল যাওয়া, পড়াশোনা নিয়ে দিনভর ব্যস্ত থাকত। বিকেলে কখনও দাদুর হাত ধরে, কখনওবা বাবার সঙ্গে পার্কে ঘুরতে যেত। কিন্তু ঘরবন্দি থেকে তার রুটিন বদলেছে। সঞ্জীব বলেন, ‘‘ব্যবসায়িক কারণে আগে মেয়েকে সময় দিতে পারতাম না। এখন মেয়ের সঙ্গে একটু বেশি মেশার সুযোগ পাচ্ছি, ওকে সময় দিতে পারায় ভাল লাগছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বিকেলে এখন বাড়ির ছাদে গল্প করে, ঘুরে ঘুরে সময় কাটাচ্ছি।’’ বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের সায়ক গুহ দশম শ্রেণির ছাত্র। সায়কের মা কুহেলি বলেন, ‘‘পড়াশোনার ক্ষতির কথা ভেবে ওকে টিভি দেখতে দিতাম না। কিন্তু এখন অবসরের সময় বাড়ায় টিভি দেখছে।’’