প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের হার কিঞ্চিৎ পড়ে এলেও তাকে রাশ টানার সাফল্য হিসেবে দেখতে রাজি নয় স্বাস্থ্য দফতর। বরং, করোনা-কালে বিধি না মেনে পুজোর হুজুগে মেতে উঠলে সংক্রমণ যে দ্বিগুণ আকারে ফিরে আসবে তা নিয়ে অশনি সঙ্কেত দেখছেন চিকিৎসকেরা।
মুর্শিদাবাদে জেলায় এখন দৈনিক একশো জনের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সংক্রমণের ছায়ায় পুজোর ভিড় ভেঙে পড়লে কোভিড ভয়াবহ চেহারা নিয়ে ফিরে আসবে। আর তার হাত ধরেই রাজ্যে ফের লকডাউনের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যার পরিণতিতে মূল্য বৃদ্ধি, রুজি হারানো এবং ঘোর অর্থনৈতিক মন্দা অপেক্ষা করে আছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্তারা জানান, যে কোনও ধরনের ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। পুজোর সময় ব্যাপক ভিড় হয়। তাই পুজো পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে বাসিন্দাদের ভিড় এড়িয়ে ঘরে থেকে পুজোর আনন্দ উপভোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। পুজোয় ভিড় করলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। আর তা মাত্রাতিরিক্ত হলে সরকারি পরিষেবা দেওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘যে কোনও ধরনের ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছি। একান্তই ঘর ছেড়ে বেরোলে মুখ ঢেকে বেরোবেন, শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলবেন, নিয়মিত হাত স্যানিটাইজ় করবেন। না হলে আমাদের সকলের জন্য বিপদ অপেক্ষা করে আছে। এটা সব সময় মনে রাখবেন।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় দৈনিক একশো জন বা তার আশপাশে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ২৮৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮২ জন। তবে, ৮৭ শতাংশ করোনা আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হয়ে উঠলেও, সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে চিকিৎসার সামন্যতম সুযোগও আর থাকবে না। জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে বহরমপুর শহর। এখানে এ পর্যন্ত ১০০৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় দৈনিক অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা থাকছে ৮০০’র আশপাশে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি করোনা হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০৫টি। এ ছাড়া সেফ হোমে ২৫০টি শয্যা রয়েছে। জেলার অধিকাংশ করোনা রোগী ‘হোম আইসোলেসনে’ থাকছেন। করোনা হাসপাতাল ও সেফ হোমে দৈনিক ১২০-১৩০ জন দৈনিক চিকিৎসাধীন থাকছেন। কিন্তু ভিড়ের জেরে করোনা সংক্রমণ বাড়লে এই পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সব আক্রান্তকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। জেলার এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘একটা সময় ইতালিতে করোনা সংক্রমণ এমন জায়গায় পৌঁছিয়েছিল যে সকল আক্রান্তকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। ইতালির মতো উন্নত দেশে যদি তা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের মতো জনবহুল দেশে তা সামাল দেওয়া যে আরও কঠিন হবে বলাই বাহুল্য। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সংক্রমণ যেন ছাপিয়ে না যায় তা সকলেরই দেখার দায়িত্ব রয়েছে। তাই ভিড়কে ভয় পান, এটা খুব জরুরি।’’