প্রতীকী চিত্র।
ক্রমশ রোগীর ভিড় বাড়ছে নদিয়ার দুই কোভিড হাসপাতালে। কমে আসছে ফাঁকা শয্যার সংখ্যা। এরই মধ্যে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ার আশঙ্কা নিয়ে পুজো আসছে। শপিং থেকে ঠাকুর দেখার হিড়িকে সংক্রমণ নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে কোভিড হাসপাতালেও ভিড় উপচে পড়তে পারে। কোথায় এত লোকের ঠাঁই হবে?
পরিস্থিতি বুঝে নদিয়ায় আরও দু’টি কোভিড হাসপাতাল খোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শুধু ইট, কাঠ, পাথরের পরিকাঠামো তৈরি রাখলেই কি চলবে? চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্ট মিলবে কোথা থেকে? নদিয়ার দু’টি কোভিড হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ২৭০টির মতো শয্যা আছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে রোজ গড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণীর যক্ষ্মা হাসপাতালে ৩০০ শয্যার একটি কোভিড-৩ পর্যায়ের হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সেথানে ২৫০টি শয্যা চালু হবে। ভেন্টিলেটর থাকছে ৫টির মতো। আগামী ২১ অক্টোবর সেটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত বড় হাসপাতালের জন্য ডাক্তার-নার্স আসবে কোথা থেকে?
এমনিতেই দু’টি কোভিড হাসপাতাল ও অন্য সাধারণ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড সামলাতে চিকিৎসকের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। অভাব হচ্ছে নার্সেরও। জেলায় এখন মাত্র ১৩ জন সরকারি মেডিসিনের চিকিৎসক আছেন। তার মধ্যে অসুস্থতার কারণে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসকে কোভিড ডিউটি করতে পারেন না। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের পাঁচ জন, ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার ও ধুবুলিয়া যক্ষ্মা হাসপাতালের এক জন মেডিসিনের চিকিৎসককে কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়েছে, যা এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নবদ্বীপ ও শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালেরও এক জন করে এবং রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের দু’জন মেডিসিনের চিকিৎসককে কল্যাণী কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন করে ডিউটি করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জেএনএম হাসপাতাল থেকে বাকি চার দিনের জন্য ১৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যুক্ত রাখা হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কল্যাণীর যক্ষ্মা হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে ২০ জন চিকিৎসক ও ৪০ জন নার্স চাওয়া হয়েছিল। তা এখনও পাওয়া যায়নি। কিছু দিনের মধ্যে ধুবুলিয়া যক্ষ্মা হাসপাতালের ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়ে যাবে। রাজ্য থেকে নতুন করে চিকিৎসক এবং নার্স না পাঠালে তা-ও অনিশ্চিত হয়ে থাকবে। এই নতুন হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর আছে। কিন্তু ভেন্টিলেটর চালানোর মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিসিইউ-এর চিকিৎসের অভাবে বর্তমান দু’টি কোভিড হাসপাতালেই সমস্যা হচ্ছে। বাড়তি চাপ যুক্ত হলে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগামী দিনে যদি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তার চাপ সামাল দিতে পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। রাজ্যের কাছে অতিরিক্ত চিকিৎসক চেয়ে পাঠানো হয়েছে। যত দিন তা না পাওয়া যাচ্ছে, আমাদের হাতে যে চিকিৎসেকরা আছেন তাঁদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নেব।”