ফলতার সেবাশ্রয় ক্যাম্পে আসা শিশুর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
ডায়মন্ড হারবারে তাঁর সংসদীয় এলাকায় চলছে স্বাস্থ্যশিবির। দূরদূরান্ত থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে সেখানে আসছেন মানুষ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ কি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘সমান্তরাল’ ব্যবস্থা? কোনও কোনও মহল থেকে এমন প্রশ্নই তোলা হচ্ছিল। বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় এমনই এক শিবিরে যোগ দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন। স্পষ্ট জানালেন, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে তাঁর সেবাশ্রয়ের তুলনা করা ঠিক নয়।
সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি মৃত্যু, নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়েছে রাজ্যে। সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা সরব হয়েছেন। এমনকি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও ওঠে। সেই আবহে অভিষেকের স্বাস্থ্য ক্যাম্পের সঙ্গেও কেউ কেউ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার তুলনা টানছেন। এই তুলনা ‘ভিত্তিহীন’ বলেই বুঝিয়ে দিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে, আমি এর সঙ্গে একমত নই।’’
অভিষেক এ-ও জানান, তিনি সেবাশ্রয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মানুষের ‘দুয়ারে’ পৌঁছে দিতে চান। তবে তা কখনওই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। তিনি জানান, গত ১৩ বছরে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিতে অনেক কাজ করেছে। তৈরি হয়েছে অনেকগুলো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। আছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে পরিষেবা পান। এ কথা বলতে গিয়ে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ টেনে এনেছেন কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথাও। তাঁর দাবি, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে সুবিধা পেতে হলে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিঃশর্তে মেলে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, ‘‘রাজ্য সরকার তার মতো যথেষ্ট করেছে। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি।’’ সেবাশ্রয় ক্যাম্প তিনি কী ভাবে পরিচালনা করছেন তার ব্যাখ্যাও দেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চেষ্টা করেছি প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে চারটে করে ক্যাম্প করার। একটা গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৫টা বুথ হলে প্রতি ৬-৭টা বুথ পিছু একটা করে ক্যাম্প করেছি। রাজ্য সরকারের আরও ব্যবস্থা রয়েছে।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘হয়তো একটা গ্রাম পঞ্চায়েতে একটা হাসপাতাল আছে, আমি সেখানে চেষ্টা করেছি একটা গ্রাম পঞ্চায়েতে চারটে করে ক্যাম্প করার।’’
অভিষেকের কথায় উঠে এসেছে মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাও। তাঁর কথায়, ‘‘ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি এ-ও বুঝিয়ে দেন, সেখানে দল বা পদ প্রাধান্য পাবে না।
উল্লেখ্য, নভেম্বরের শেষে অভিষেক এই নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। গত ২ জানুয়ারি নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মযজ্ঞের সূচনা করেন তিনি। চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভায় সাত দফায় হবে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত কর্মসূচি।