প্রতীকী ছবি।
বছর শেষে করোনা সংক্রমণের রেখচিত্র নিম্নমুখী ঠিকই, কিন্তু তার পরেও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কারণ যে ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা আছড়ে পড়ছে, চোখে রাঙাচ্ছে নতুন ‘করোনাভাইরাস স্ট্রেন’, তাতে নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই।
দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে ধরে নিয়েই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি রাখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলার কর্তাদের কথায়, গোটা দেশেই করোনার সংক্রমণ স্বাভাবিক নিয়মে কমছে। নদিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। আবার যদি দ্বিতীয় ধাক্কা আসে সে ক্ষেত্রেও নদিয়া ব্যতিক্রম হবে না। তাই প্রস্তুত থাকতেই হচ্ছে।
গত মার্চে করোনার প্রকোপ প্রথম ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে শুরু করে। লকডাউনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরতে থাকেন জেলায়। সকলেই কমবেশি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাঁদের দৌলতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মহামারি দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা।
আনলক পর্বে আবার তুমুল ভিড় জমতে থাকে হাটে-বাজারে, দোকানে-শপিং মলে। অনেকেই মুখে মাস্ক পড়ার কথা ভুলে যেতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকেও রাস্তায় নামতে হয়। আবারও আশঙ্কা তৈরি হয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার। এর পরে চালু হয় লোকাল ট্রেন। সে নিয়ে নানা আশঙ্কার মধ্যেই এসে পড়ে পুজোর মরশুম। দুর্গা থেকে কালী, জগদ্ধাত্রী থেকে রাসে মেতে ওঠে জেলা। করোনা বিধি উড়িয়ে জগদ্ধাত্রী ভাসানের দিন রাস্তায় নামে কৃষ্ণনগর, রাসে শান্তিপুর। পুজোর বাজারের ভিড় তো ছিলই। এবং বছর শেষে বড়দিনের মেলা।
এতগুলো ফাঁড়া কাটিয়ে এখনও লক্ষ্মণরেখার মধ্যেই রয়েছে করোনা সংক্রমণ। মাঝে দৈনিক সংক্রমিতের হার দুশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেটা ক্রমশ কমতে কমতে এখন দৈনিক ৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। দিন কয়েক আগে সংখ্যাটা মাত্র ২৬-এ নেমে এসেছিল। সেই অর্থে নদিয়া এখন অনেকটাই ‘স্বাভাবিক’। বিশেষ করে পড়শি জেলাগুলির তুলনায়। বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত দুটো কোভিড হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন মাত্র ৫৫ জন। সেফ হোমে কোনও রোগী নেই। জেলার কোভিড চিকিৎসার নোডাল অফিসার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ান বলছেন, “রাজ্য থেকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, সে সব হুবহু পালন করেই আমরা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা কিছু কিছু পদক্ষেপ করেও সাফল্য পেয়েছি।”
এর পরেও সতর্কতা জারি রয়েছে। কল্যাণীর এনএসএস যক্ষ্মা হাসপাতালে তিনশো শয্যার নতুন কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। সঙ্গে কৃষ্ণনগরের দেড়শো শয্যার গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালও আছে। কর্তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইংলন্ডে করোনা দ্বিতীয় পর্যায়ে ফিরে এসেছে। সেই কারণে কোনও ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না। অসিতবাবু বলেন, “সংক্রমণ দ্বিতীয় দফায় ফিরে এলে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা সমস্ত রকম পরিকাঠামো তৈরি রাখছি।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “এখনও আরও অনেক দিন সতর্ক থাকতে হবে। করোনার সঙ্গে অনেকটা লড়াই বাকি।”