ফাইল চিত্র।
দু’একটা ছোটখাটো ভুলত্রুটি ছাড়া ‘স্টেজ রিহার্সাল’ নেহাত মন্দ হয়নি! আদালতের নির্দেশ মেনে নবদ্বীপের দুর্গাপুজো মোটের ওপর নিয়ম বেঁধেই হয়েছে। কিন্তু মহলার সঙ্গে মঞ্চের ঢের ফারাক। সেই ফারাকটুকু যথাসম্ভব কম করতে পুজো মিটতে না মিটতেই মাঠে নেমে পড়ল নবদ্বীপের পুলিশ-প্রশাসন।
করোনাকালে নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উৎসব রাস ঘিরে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এ শহরে ভিড় ঠেকানোর আসল চ্যালেঞ্জ রাসে। ছোট-বড়, অনুমতিপ্রাপ্ত বা অনুমতিহীন মিলিয়ে নবদ্বীপে রাসে প্রায় শ’চারেক প্রতিমা হয়। হাজারো মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন ভিড়। সেই সঙ্গে রাসের দিন সকাল ও দুপুর জুড়ে ‘নবমীর’ শোভাযাত্রা এবং পর দিন ‘আড়ং’ ঘিরে লাখো মানুষের উদ্দাম জমায়েত এই করোনা কালে কী করে সামলানো যাবে তা নিয়ে ঘুম উড়েছে প্রশাসনের কর্তাদের।
প্রথা মেনে কোজাগরী লক্ষীপুজোর রাতে কয়েকশো প্রতিমার পাট পড়ার মধ্যে দিয়ে রাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। রাতভর প্রবল শব্দবাজি ফাটিয়ে পাটপুজো ঘিরে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন শহরের আবালবৃদ্ধবণিতা। হিসাব মতো আগামী শুক্রবার রাতে নবদ্বীপ রাসের পাট পুজো হওয়ার কথা। দশমীর দিন থেকেই পাড়ায়-পাড়ায় সাজ-সাজ রব পড়ে গিয়েছে। বিশালকায় রাসের প্রতিমার প্রকাণ্ড সব পাট ধুয়ে মুছে রং করার কাজ প্রায় শেষ। বেশ কিছু উৎসাহী রাস উদ্যোক্তা অতিমারির তোয়াক্কা না করে অন্য বারের মতোই রাসের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিমার চালির বাঁশ পর্যন্ত কাটা শেষ করে ফেলেছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় রাসের রাশ ধরতে বুধবার থেকেই একের পর এক পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার সকাল থেকে শহর জুড়ে মাইক প্রচারের মাধ্যমে পাট পুজো উপলক্ষে নিষিদ্ধ শব্দবাজি না ফাটানোর জন্য সতর্ক করা হয়। তা অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাস বারোয়ারির কাছে পাঠানো হচ্ছে আসন্ন রাসকে দূষণহীন ও নিরাপদ করতে একটি লিখিত আবেদন, যা সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির পদাধিকারীকে পুলিশের নথিতে সাক্ষর করে গ্রহণ করতে হবে। গত বার অনুমতিপ্রাপ্ত পুজো কমিটিগুলির কাছ থেকে প্রতিটি প্রতিমার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।
নবদ্বীপের আইসি কল্লোলকুমার ঘোষ বলেন, “কোভিডের সঙ্গে আট মাস ধরে লড়াই চলছে। এই অবস্থায় নবদ্বীপের রাসের উদ্যোক্তাদের বুঝতে হবে, এ বারের রাস অন্য রকম। পুলিশ বা আদালত সব জায়গায় নজরদারি করবে কেন। নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন যে এ বার বাজনা হবে না। নবমীর পুজো নিশ্চয়ই দেওয়া হবে তবে শোভাযাত্রা নয়। চেনা আড়ং হবে না। আমরা চাই রাস হোক, কিন্তু সুরক্ষা বিধি মেনে। না হলে আইন তার নিজের পথে চলবে। ”
ইতিমধ্যে করোনা আবহে উৎসব মরশুমে শব্দবাজির বিরুদ্ধে আগাম পথে নেমেছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখা। লক্ষ্মীপুজোর রাতে নবদ্বীপের রাসের কাঠামো পুজো উপলক্ষে সমগ্র নবদ্বীপ শহর জুড়ে শব্দবাজি ফাটিয়ে যে তাণ্ডব চলে বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা দিতে এবং শব্দবাজি নিয়ন্ত্রনের দাবীতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখা শুরু করছে ধারাবাহিক প্রচার। সংগঠনের নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপচন্দ্র দাস বলেন, “শব্দবাজির কারণে বয়স্ক মানুষেরা যেমন অসুস্থ হয়ে পড়েন, হার্টের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁদের কাছেও এই উৎসব মৃত্যুর অন্য নাম। করোনাকালে রাসের চরিত্র বদলাতেই হবে সকলের মঙ্গলের জন্য।”