‘অন্য’ অধীর। —নিজস্ব চিত্র।
পরনে ফুলশার্ট, ট্রাউজার্স। চোখে চশমা। মাথায় ক্যাপ। মোটরবাইক চালাতে চালাতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো জনতার উদ্দেশে করজোড়ে প্রণাম করছেন। কখনও দু’হাত মেলে ধরেছেন। কখনও বাইকের হ্যান্ডল ছেড়ে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠছেন। তিনি অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের সাংসদ। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা। বহরমপুর জাতীয় সড়কের বাইপাসের একটি অংশের উদ্বোধনে অন্য মেজাজে ধরা দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন তিনি। এক জন প্রবীণ রাজনীতিবিদ তথা পুরনো জনপ্রতিনিধির কাণ্ড দেখে সমালোচনা শুরু করেছে তৃণমূল। একই সুর শোনা গেল বিজেপি নেতৃত্বের মুখেও। তবে অধীর আছেন অধীরেই।
বহরমপুর শহর দিয়ে চলে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে জাতীয় সড়কের রুট হওয়ায় বহরমপুর শহরে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। উৎসবের মরসুমে সেই যানজট রুখতে বলরামপুর থেকে বাইপাস রাস্তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল রবিবার। এখন থেকে উত্তরবঙ্গগামী যান চলাচল সচল এবং স্বাভাবিক হবে বলে দাবি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। সড়ক তৈরির কৃতিত্ব কার, তাই নিয়ে ইতিমধ্যে কংগ্রেস এবং বিজেপির দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। সেই রাস্তাতেই হেলমেট ছাড়া এবং কখনও কখনও হাত ছেড়ে বাইক চালিয়ে বিতর্কে জড়ালেন বহরমপুরের সাংসদ।
বাইক চালাতে চালাতে কখনও কর্মী-সমর্থকদের দিকে দু’হাত তুলে ‘চিয়ার্স আপ’ করেছেন অধীর। কখনও ক্যাপটা ঠিক করার অছিলায় দু’হাত ছেড়ে বাইক চালিয়েছেন। আবার মাঝেমধ্যেই হাততালি দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় বাইক চালাতে চালাতে এ ভাবেই নানাবিধ ‘স্টান্ট’ করেছেন কংগ্রেস নেতা। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর একযোগে কটাক্ষ শুরু করেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। রাজ্যের শাসকদলের দাবি, সাংসদ হয়ে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এ রকম বেআইনি কাজ কেউ করলে, সমাজে খারাপ বার্তা যায়। আর বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, ‘‘কিশোরদের বালখিল্য যদি অধীরবাবু এই বয়সে করেন, সেটা হাস্যকর।’’ তাঁদের অভিযোগ, কার্যত অল্পবয়সিদের দুর্ঘটনায় প্ররোচনা দিয়েছেন অধীর।
বিরোধীদের কথার কোনও জবাব দেননি অধীর। অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের কথায়, ‘‘আইন প্রণেতারা আইন ভাঙার কাজ করলে সমাজে ভুল বার্তা দেয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অধীরবাবু অবশ্য দীর্ঘ দিন থেকেই আইন ভাঙতে সিদ্ধহস্ত।’’ কিন্তু কংগ্রেস এতে বিতর্কের কিছু দেখছে না। তাদের দাবি, একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে অহেতুক রাজনীতি হচ্ছে। কংগ্রেসের জেলা কংগ্রেস মুখপত্র জয়ন্ত দাসের কথায়, ‘‘সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে যোগ দেওয়া আর দৈনন্দিন প্রয়োজনে বাইক চালানো এক জিনিস নয়।’’