পড়ে রয়েছে জমি। নিজস্ব চিত্র।
বরাদ্দ অর্থ এসে পড়ে আছে এক বছর। অথচ শমসেরগঞ্জের অনুপনগর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩০০ শয্যার ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব’ গড়ার টেন্ডারই চূড়ান্ত হয়নি। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এ কথা শুনে রীতিমত বিরক্ত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানতে চান, ‘‘কী ব্যাপার?’’ পূর্ত দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব নবীন প্রকাশ সটান উঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কবুল করে বসেন, ‘‘ডিপিআর (ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করতে সময় লাগার কারণেই এই বিলম্ব ম্যাডাম।’’ মুখ্য সচিব রাজীব সিংহ পাশ থেকে তখনই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, কাজ শেষ করতে হবে দ্রুত। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর নিদান ছিল, এখন থেকে এ ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিপিআর তৈরি করার কোনও দরকার নেই। চাইল্ড হাব, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কিসান মান্ডি— যাই হোক না কেন, একই ধরণের প্রকল্পে সব ক্ষেত্রে বরাদ্দ হবে একই পরিমাণ অর্থ, তাই কোনও এলাকার জন্য আলাদা করে আর ডিপিআর তৈরির দরকার নেই। এতে সময়ও বাঁচবে, বাঁচবে অর্থও।
বৈঠকেই উঠে আসে মুর্শিদাবাদ জেলায় জঙ্গিপুরের ৭টি ব্লকের মধ্যে রঘুনাগঞ্জ ২, সুতি ১ ও ২, শমসেরগঞ্জ, সাগরদিঘি, ফরাক্কা ৬টি ব্লকেই এখনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে ঘাটতি রয়েছে। ডোমকলের কয়েকটি এলাকাতেও একই অবস্থা। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত সিংহ মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, রাজ্যে এই হার ৯৮.৫ হলেও মুর্শিদাবাদ জেলায় সে হার এখনও ৯৫ শতাংশ।
এই হার বাড়াতে জঙ্গিপুর ও ডোমকলের প্রচার বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই উঠে আসে অনুপনগরের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের প্রসঙ্গ। ৩০০ শয্যার এই হাব গড়তে ২১.৫৯ কোটি টাকা মিলেছে গত জানুয়ারি মাসে। ৪.৭৮ কোটি টাকা খরচ হবে বিদ্যুৎ পরিকাঠামো গড়তে। ১৬.৮০ কোটি টাকা খরচ হবে ভবন নির্মাণে। পূর্ত দফতরের বহরমপুর ডিভিসনকে সে কাজ করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া জেলার আর কোথাও মা-শিশুর এই ধরণের চিকিৎসা কেন্দ্র ব্যবস্থা এই প্রথম। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা জঙ্গিপুরের মানুষ যথেষ্ট উপকৃত হবেন। বর্তমানে ৩০ শয্যার অনুপনগর গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপরই ভরসা এলাকার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের। চিকিৎসক, নার্স, ও কর্মীদের আবাসনগুলি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন। থাকেন না কেউই।
৩০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতি দিন রোগী ভর্তির সংখ্যা গড়ে ৬৫ জন। কখনও রোগীর সংখ্যা ৯০ পেরিয়ে যায়। তবু রাজ্যের গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রসব সাফল্যে গত বছর সবার উপরে স্থান পেয়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছে অনুপনগরের ওই গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক বছরে শিশু প্রসবের সংখ্যা ৯০৪৭। অর্থাৎ শিশুর জন্মহার প্রতি দিন গড়ে ২৫ জন। শুনে কিঞ্চিৎ আশ্বস্থ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন— ‘‘পরিসংখ্যান অনেক হল, কাজটা শেষ করুন এ বার।’’