—প্রতীকী চিত্র।
রাজনৈতিক ঘূ্র্ণাবর্তে থমকে আছে নদিয়ার গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন। কিন্তু শুধুই কি রাজনৈতিক স্বার্থ না কি এর পিছনে আছে কোটি কোটি টাকার খেলা?
জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, টাকা খরচ করতে না পারার পিছনে অন্যতম কারণ ঠিকাদারি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর রেষারেষি। এই রেষারেষি অনেক ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দরপত্র ডেকে কাজের বরাত দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। কাজ শুরু করতে না পারায় বরাদ্দ টাকাও খরচ করা যাচ্ছে না। শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপির বিরুদ্ধেও সমান ভাবে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিদায়ী বোর্ডের অনুমোদন করে যাওয়া প্রকল্পের কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না বর্তমান বোর্ডের কর্তারা। যার জেরে অনেক পঞ্চায়েতে কাজের গতি স্লথ হয়ে গিয়েছে।
এর সঙ্গে রয়েছে পঞ্চায়েতের কর্মীদের একাংশের খামতি বা নিষ্ক্রয়তাও। জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, সেই সমস্ত কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ৩৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীকে দূরে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী সহায়ক, নির্মাণ সহায়ক ও সহায়ক। যদিও পঞ্চায়েত কর্মীদের পাল্টা দাবি, তাঁদের সিন্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। পঞ্চয়েত সদস্যেরা যে সিন্ধান্ত নেন তার বাইরে তাঁরা যেতে পারেন না। সেই কারণে তাদের ইচ্ছা থাকলেও বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেন না। অথচ ব্যর্থতার দায়ে তাঁদের শাস্তি পেতে হচ্ছে।
কর্মীদের আরও অভিযোগ, টাকা খরচে গতি আনতে তাঁদের নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মতো পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারণ এ ক্ষেত্রে যতটা না কাজ করা লক্ষ্য, তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ দেখানো। এক পঞ্চায়েত কর্মীর কথায়, “কাজের চেয়ে টাকা খরচের গুরুত্ব বাড়ছে। ফলে কাজ না করে বা কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। যত দিন না পঞ্চায়েতগুলিতে ঠিকাদারি-রাজ বন্ধ হচ্ছে তত দিন ঠিক মতো কাজ হওয়া সম্ভব নয়।”
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। এই পঞ্চায়েত গুলির প্রধান-উপপ্রধান ও কর্মীদের সঙ্গে বার বার মুখোমুখি ও ভার্চুয়াল বৈঠক করার পরেও কাজের গতি আশানুরূপ নয় বলে তাঁরা কার্যত মেনে নিচ্ছেন। নদিয়া জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “যতটা কাজ করার কথা, নানা কারণে কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত তা করে উঠতে পারছে না। ভার্চুয়াল বৈঠকের পাশাপাশি তাদের ডেকে কাজের রিভিউ করা হচ্ছে। আশা করছি, এ বার কাজে গতি আসবে।” (শেষ)