—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অভীক দে-ঘনিষ্ঠ যে ছাত্রনেতাদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন জেএনএম হাসপাতালের এক প্রাক্তন সুপার, এ বার ওই ছাত্রদেরই হস্টেল দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে তাঁর উপরে। ফলে এই নিয়োগ নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি কল্যাণী জেএনএমে অধ্যক্ষ-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন ঘটেছে। ছাত্রাবাসের সুপার পদে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সৌম্যজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসক-নেতা অভীক দে-র ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতাদের বিবাদ একাধিক বার সামনে এসেছে। এখন সেই বিবাদ ফের উসকে উঠলে পরিস্থিতি ফের ঘোরালো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কলেজের অনেকেই।
যে ছাত্রাবাস দেখভালের দায়িত্ব সৌম্যজ্যোতিকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এখনও স্নাতকোত্তর স্তরের অভীক-ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা শেখ অখিল-অলিম বিশ্বাসেরা থাকেন। এঁদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ চালানো থেকে নানা উপায়ে টাকা তোলার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। থাকেন এঁদের ‘যোগ্য উত্তরসূরী’ বলে পরিচিত বিচিত্রকান্তি বালাও, কল্যাণীরই বাসিন্দা হয়েও যাঁর ছাত্রাবাসে থাকা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছে।
সাম্প্রতিক অতীতে হাসপাতাল সুপার থাকাকালীন অভীক-অনুগামীদের ‘অনিয়ম’ ও ‘দুর্নীতি’ সামনে এনে সরব হয়েছিলেন সৌম্যজ্যোতি। সেই সময় এই অখিল-বাহিনীর হুমকির জেরেই টানা দশ দিন হাসপাতালে ঢুকতে পারেননি বলে তাঁর অভিযোগ। এই নিয়ে থানা-পুলিশও হয়। কলেজেরই এক অধ্যাপকের কথায়, “আর জি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত ও ধরপাকড় শুরু হওয়ায় এই নেতারা এখন চাপে আছে ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি সামলে গেলেই ওরা স্বমূর্তি ধারণ করবে। তখনই সমস্যা শুরু হবে।”
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আগের হস্টেল সুপার ইস্তফা দেওয়ার পর সৌম্যজ্যোতি নিজে উৎসাহ দেখানোতেই কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সহমতের ভিত্তিতে তাঁকে ওই পদ দেওয়া হয়েছে। অভীক সাসপেন্ড হওয়ার পরেই অখিলদের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে মণিদীপ পালকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর পরে্ই ‘ডিন অব স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স’ প্রদীপকুমার মহান্ত ইস্তফা দেন। হস্টেল সুপারের পদ ছাড়েন অভিজিৎ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অয়ন ঘোষ ও দেবাশিস মণ্ডল। সেই জায়গায় দায়িত্ব নেন সৌম্যজ্যোতি ও অরিজিৎ দাস। সোমবার মণিদীপ বলেন, “আমরা কাউকে সরাইনি। আগের পদাধিকারীরা লিখিত ও মৌখিক ভাবে ইস্তফা দেওয়ার পর অন্যেরা সর্বসম্মত ভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন।”
জেএনএম সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল সুপার পদে নিয়োগের আগে সৌম্যজ্যোতি হস্টেল সুপারের দায়িত্ব সামলেছেন। সেই পূর্ব অভিজ্ঞতার দরুণ তিনি ফের ছাত্রাবাসের দায়িত্ব নিতে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে উৎসাহ প্রকাশ করেন। এখন অনেকেরই প্রশ্ন: অখিল-আলিমেরা তাঁকে প্রতি পদে বাধা দেবে না তো? এই প্রশ্নের সদুত্তর পেতে অখিলকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। আলিম দাবি করেন, “আমি কোনও দিন কোনও বিতর্কিত ব্যাপারে থাকিনি। আগামী দিনেও থাকব না। কিছু দিনের মধ্যে পড়া শেষ হয়ে গেলেই আমি চলে যাব।”
জেএনএমের ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের বর্তমান সভাপতি বিচিত্রকান্তি বালা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও মূলত ‘দাদাগিরি’ এবং ‘সিন্ডিকেট’ চালানোর জন্যই হস্টেলে থাকেন। তবে বিচিত্রকান্তির দাবি, “এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। গ্রুপ স্টাডির সুবিধা হয় বলে আমি হস্টেলে থাকি।”
দ্বিতীয় ইনিংসে এঁদের সামলাতে পারবেন তো? সৌম্যজ্যোতি বলেন, “কোনও সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষকে জানাব। ছাত্রাবাসে শান্তি ফেরাতে চাই। কেউ স্বাভাবিক ছাত্রজীবনে ফিরতে চাইলে সেই সুযোগ দেব। তবে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে কোনও আপস নয়।”