প্রতীকী ছবি।
বছর দেড়েক আগে নিজের ফুটবল দলের নাম দিয়ে খুলে ফেলেছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। আর সেই গ্রুপে প্রায় শতাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি। এত দিন পর্যন্ত মহানন্দে সেই গ্রুপে চলছিল নানা তথ্যের আদান-প্রদানও। কিন্তু এনআইএর ডোমকল হানার পরে সাধের সেই গ্রুপটাকেই ডিলিট করে দিয়েছেন ডোমকলের শিক্ষক সেলিমুল ইসলাম। তার দাবি, ‘‘খুব হয়েছে বাবা, কোনও গ্রুপবাজিতে আর নয়। ওসব কায়দা করতে গিয়ে কখন আল কায়েদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ব!’’ জলঙ্গির বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেছেন, ‘‘এনআইএ-র তদন্তে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথা বারবার উঠেছে। ফলে এমন সামাজিক মাধ্যম থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। হয়তো নিজের অজান্তেই এমন কোনও না কোন গ্রুপে ঢুকে পড়বো যেটা আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনবে।’’
সেলিমুলের গ্রুপের নাম ‘ভোরের আলো’। দিন কয়েক আগে সেই আলো নিভে গিয়েছে এনআইএ আতঙ্কে। একই বিভিন্ন গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসেছে সেলিমুল। কেবল সেলিমুল নয়, ডোমকলের বাসিন্দা রাজিব শেখ বেরিয়ে এসেছেন কলেজের বন্ধুদের নিয়ে গড়া একটি গ্রুপ থেকে। সব মিলিয়ে ডোমকল জুড়েই এখন এনআইএ আতঙ্কের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নিয়ে আতঙ্ক চেপে বসেছে সাধারণ মানুষের মনে। কেউ কেউ ডিলিট করে দিচ্ছেন সাধের গ্রুপ, কেউ আবার গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন স্রেফ আতঙ্কেই।
তাঁদের বক্তব্য, নানা গ্রুপে নানা কথা হয়। গ্রুপে যাঁরা রয়েছেন, সকলকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেনও না। তাই ঝুঁকি নেওয়া যায় না। কে কোন কথাটা সহজ করে বলছে, নাকি, তার মধ্যে কোনও ‘কোড’ রয়েছে, তা বোঝা শক্ত। তাই গ্রুপে না থাকাই ভাল।
কেবল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নয়, অনেকেই ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম নিয়েও আতঙ্কে ভুগছেন জঙ্গি সন্দেহে এলাকার ১০ জন যুবক গ্রেফতার হওয়ার পরে। ডোমকলের বাসিন্দা শাহিন আনসারী বলছেন, ‘‘কী দরকার বাপু! কাজের নয় এমন আর কোনও গ্রুপের সঙ্গে সঙ্গে নেই। প্রায় গোটা পাঁচেক গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসেছি, বন্ধুদের বলে দিয়েছি ক্ষমা করবেন। এখন থেকে আর কোনও গ্রুপে থাকতে পারবো না।’’
ডোমকলের আমজনতা মনে করছে, ইন্টারনেটই যাবতীয় গন্ডগোলের মূল। ডোমকলের হুমায়ূন কবির বলছেন, ‘‘বন্ধুরা মিলে ‘আমরা ক'জন’ নামের একটি গ্রুপ তৈরি করছিলাম বছর কয়েক আগে। দিন কয়েক আগে সেটি মুছে দিয়েছি। সকলেই বলছেন এই গ্রুপ নাকি যত নষ্টের গোড়া।’’ জলঙ্গির এক বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলছেন, ‘‘বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঢুকেছিলাম, কিছু ভাল তথ্য আদান-প্রদান হবে ভেবে, কিন্তু এখন দেখছি ভালর থেকে মন্দই বেশি। তাই গ্রুপ মুছে দিয়েছি।’’
ডোমকল গার্লস কলেজের অধ্যাপক সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান প্রিয়ঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘যে ঘটনাটা ঘটেছে তাতে এমন ভয় হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কেবল সাধারণ অসচেতন মানুষ নয়, আমরা অনেক শিক্ষিত মানুষও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। একটা ক্লিক আমাদের জীবনের যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ কেড়ে নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলির উচিত আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।’’