বাবার কোলে ছোট্ট রাজা। — নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির সামনের মাঠে গত রবিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল বছর ছয়েকের রাজা ঘোষ। পরিবারের দাবি, তিন জন ব্যক্তি রাজাকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন বলে তাদের জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, এর পরই রাজাকে ছাড়াতে দু’লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাড়িতে যখন হুলস্থুল, সেই সময় রাজা অপহরণকারীদের ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ নিয়ে বাড়ির ছাদে চলে যায়। সেখান থেকে সটান ঝাঁপ পাশের বাড়ির খড়ের গাদায়। তার পর অচেনা রাস্তা ধরে টানা আধ ঘণ্টা দৌড়। শেষে এক সব্জি বিক্রেতার কাছে গিয়ে সব খুলে বলে রাজা। ওই ব্যক্তিই নিজের ফোন থেকে রাজার বাড়িতে ফোন করে খবর দেন। পরে বাবা-মা গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসেন। ছ’বছরের শিশুর উপস্থিত বুদ্ধি আর অসম সাহসের নমুনা দেখে অবাক পাড়াপড়শিরা। রাজার তারিফ এখন চারদিকে। যদিও ছ’বছরের শিশুর বলা সব কথাই পুরো ‘সত্যি’ বলে মানতে চাইছেন না পুলিশকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ওই শিশুর ‘অপহরণ’ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে! যদিও মুক্তিপণের জন্য আসা ফোনের সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে ভগবানগোলা থানার পুলিশ।
রবিবার বিকেল থেকে খোঁজ মিলছিল না ভগবানগোলার কুঠিরামপুর অঞ্চলের বরবড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সুজয়কুমার ঘোষের ছেলে রাজার। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, শিশুটিকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন কয়েক জন। তার পরে লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে শিশুর পরিবারে। শিশু অপহরণের তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এর মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে পরিবারের কাছে ফোন করে শিশুটি। তার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছন সকলে। অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় রাজাকে। অপহরণে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তিন ব্যক্তিকে আদালতেও হাজির করেছে পুলিশ।
রাজার বাবা সুজয় বলেন, ‘‘ছেলে এক সব্জি বিক্রেতার ফোন থেকে ফোন করে। তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমরা পৌঁছে ছেলেকে উদ্ধার করি। ওইটুকু বাচ্চা যে ভাবে সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিল, ভেবেই অবাক লাগছে।’’ আর রাজা বলছে, ‘‘কান্নাকাটি করলেই ওরা চাকু দিয়ে ভয় দেখাত। রাতে দেখলাম সবাই ঘুমোচ্ছে। তার পরেই ছাদে উঠে খড়ের গাদায় লাফ দিই। ছুটতে ছুটতে গিয়ে এক সব্জি নিয়ে বসা এক কাকুকে সব বলি। ওই কাকুই বাড়িতে ফোনে ধরিয়ে দেয়।’’ প্রায় ২৪ ঘণ্টা অপহরণকারীদের ‘কবল’ থেকে ‘ফিরে’ রাজা বলছে, ‘‘ওরা ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে অনেক। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি।’’
যদিও এই রুদ্ধশ্বাস ‘অপহরণকাণ্ড’ নিয়ে ধন্দে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, শিশুটিকে কেউ অপহরণ করেনি। ডানপিটে স্বভাবের রাজা নিজেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তার পর একটি জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে সে। ভোরে ঘুম ভাঙার পর এক জন সব্জি বিক্রেতার কাছে গিয়ে অপহরণের ‘গল্প’ ফাঁদে। পুলিশ সূত্রে খবর, ভগবানগোলায় অপহরণের ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই কেউ বা কারা এলাকায় ঘোষণা করে দেয়, শিশুর খবর দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের লোভে মুক্তিপণ চেয়ে বাড়িতে ফোন করেন যে তিন জন, তাঁদেরই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের একটি অংশ মনে করছে, ধৃতেরা ‘অপহরণের’ ঘটনার সঙ্গে সম্ভবত জড়িত নন। লালবাগের এসডিপিও অসীম খান বলেন, ‘‘অপহরণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। ছেলেটির বয়ান শুনে মনে হচ্ছে ওকে কেউ অপহরণ করেনি। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা ভুয়ো ফোন করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।’’