যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।
আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল। নাম গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে অভিযোগ জানিয়ে হস্টেল ছাড়লেন স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। ঘটনা ঘিরে আবার চাঞ্চল্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের সিডি ব্লকে থাকতেন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন ওই ছাত্র। অভিযোগ করেন, তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তিনি হস্টেলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাই হস্টেল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে, অভিযোগকারী দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র। চিঠিতে কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘‘হস্টেলে যাওয়ার পর থেকে আমার উপর নানা ভাবে র্যাগিংয়ের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে যখন হস্টেলে মেস চালু হয়, তখন আমায় মেস কনভেনর করা হয়। কিন্তু, আমি নতুন (আবাসিক)। এবং আমার সঙ্গে আরও এক জন মেস কনভেনরও নতুন। তাই মেস কমিটি যে ভাবে বাজার করতে বলে, সেই ভাবে বাজার করি। তা সত্ত্বেও গত ২৫ নভেম্বর সকালে বাজারের পর মাছের টুকরো কেন ছোট এবং ডাল কেন পাতলা হয়েছে, এই বলে আমাকে অকথ্য গালাগালি করা হয়।’’ ওই ছাত্রের অভিযোগ, ওই ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। পরে রাতে খাবারের সময়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। তার পর মেস কনভেনরের পদ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। এবং তার পর তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
চিঠিতে ছাত্র লিখেছেন,‘‘আমায় বাদ দিয়ে আমায় নিয়ে একটা জিবি ডাকা হয় এবং তাতে এটা বলা হয় যে, ‘ওর খুব অ্যাটিটিউড। তাই ওকে একটু টাইট দিতে হবে।’’’ ছাত্রের এ-ও অভিযোগ, তার পর থেকে তাঁকে দেখে নানা অঙ্গভঙ্গি করেন কয়েক জন আবাসিক। এমতাবস্থায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তিনি। অভিযোগপত্রে ওই আবাসিক লেখেন, ‘‘হস্টেলে থাকতে সেফ ফিল করছি না। আর আমার পক্ষে বাইরে থেকে পড়াশোনা চালানো সম্ভব নয়।’’
বস্তুত, গত অগস্ট মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের নীচে এক প্রথম বর্ষের ছাত্রের দেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে র্যাগিংয়ের। ওই ঘটনায় জোর শোরগোল শুরু হয়। ঘটনায় বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হন। যাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীও ছিলেন। ওই ঘটনার পর র্যাগিং রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে আবার সেই র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠায় চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে।
যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটার তরফে অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মেন হোস্টেলে র্যাগিংয়ের জেরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে না মেনে, কোনও ছাত্রের (জেলে নেই এমন) বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা না নিয়ে বিভিন্ন কমিটির নাম করে দোষীদের আড়াল করে যাচ্ছেন। তারই ফলস্বরূপ আরও একটি র্যাগিংয়ের ঘটনা।”