ফাইল চিত্র
কখনও গোষ্ঠী কোন্দল, কখনও মহিলার নাম জড়িয়ে সমাজমাধ্যমে কুৎসা, কখনও তৃণমূল বিধায়ক খুনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চার্জশিট। সব মিলিয়ে নদিয়ার দক্ষিণে বিজেপির সংগঠনের রাশ আর রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের হাতেই থাকবে কি না তা নিয়ে দলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।বছর চারেক আগে নদিয়ায় দলের সংগঠন উত্তর-দক্ষিণে ভাগ হওয়ার পরে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ পেয়েছিলেন জগন্নাথ। গত বছর সাংসদ হওয়ার পরে সেই পদ ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু বছর চারেক ধরে এই এলাকায় দলের সংগঠনে কার্যত তিনিই হয়ে উঠেছেন সর্বেসর্বা। জেলার দক্ষিণে বেশির ভাগ মণ্ডল কমিটিতে এখনও তাঁর আধিপত্য।
গত বছর জগন্নাথ সাংসদ হওয়ার পরে তাঁর বদলে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে দক্ষিণ জেলা সভাপতি করে বিজেপি। দলে জগন্নাথে-বিরোধী বলে পরিচিত মানবেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর শিবিরের দ্বন্দ্ব চাপা থেকেনি। দলের দফতরেই মানবেন্দ্রকে নিগৃহীত হতে হয়, যার জেরে দল বহিষ্কার করে জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠ রাখাল সাহা এবং তাঁর ছেলেকে। মাস কয়েকের মধ্যেই অবশ্য মানবেন্দ্রকে সরিয়ে জগন্নাথেরই ঘনিষ্ঠ অশোক চক্রবর্তীকে জেলা সভাপতি করে দল। এর পিছনে জগন্নাথের হাত ছিল বলেই অনেকের বিশ্বাস। কিন্তু সেই অশোকের সঙ্গে দ্রুত ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা জগন্নাথের সৌহার্দ্য চিড় খেয়েছে বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। দলের মধ্যেই জগন্নাথ বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে বিজেপি কিন্তু জগন্নাথকে প্রথমে লোকসভার টিকিট দতে চায়নি। দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন তরুণ চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী। কিন্তু তৃণমূল সরকার তাঁকে সরকারি চিকিৎসকের পদ থেকে অব্যাহতি না দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে জগন্নাথের কপালে শিকে ছেঁড়ে। মতুয়া ভোট এবং মোদী হাওয়া মিলে বিপুল ভোটে জেতেন তিনি। কিন্তু এত বড় সাফল্য হঠাৎ হাতে এসে পড়ায় তিনি কিছুটা বেসামাল হয়ে গিয়েছেন বলে তাঁর বিরোধীদের দাবি। প্রকাশ্যে যে যা-ই বলুন, মুকুটমণির সঙ্গে এখন জগন্নাথের সম্পর্ক যে যথএষ্ট ‘শীতল’ তা বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়।
মানবেন্দ্র সভাপতি থাকাকালীন মুকুটমণিকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অশোক সভাপতি হওয়ার পরে আর জেলার কোনও পদেই ঠাই হয়নি মুকুটের। তবে মাস কয়েক আগেই নদিয়ার দক্ষিণে মতুয়াদের সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন তিনি, যা নিশ্চিত ভাবেই জগন্নাথের জন্য সুখবর নয়। গোষ্ঠীকোন্দল বা মহিলা ঘটিত কুৎসা তবু এক রকম, কিন্তু জগন্নাথ ইদানীং কালে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে নাম জড়িয়ে যাওয়ায়।
অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে তাঁর নামে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে সিআইডি, যার জেরে সোমবার রানাঘাট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হয়েছে সাংসদকে। সে দিনও কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁর। আদালতে যাওয়ার আগে দলের দফতরের সামনে বাঁধা মঞ্চে অন্যদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে দল থেকে বহিষ্কৃত রাখাল সাহাকেও। যদিও জগন্নাথের দাবি, “ওই মঞ্চ দলের নয়। আমাকে এবং দলকে ভালবেসে অনেকেই এসেছেন।” প্রত্যাশিত ভাবেই কর্মীদের মধ্যে জল্পনা চলছে, জগন্নাথের ডানা ছাঁটা হবে কি না, সম্প্রতি তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়ালেও অশোক পদ খোয়াতে পারেন কি না ইত্যাদি। অশোক শুধু বলেন, “এই বিষয়ে যা বলার দলের রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন।” তবে রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এই মুহুর্তে জেলায় সাংগঠনিক রদবদলের সম্ভাবনা কম। আর জগন্নাথ বলছেন, “আমি জনপ্রতিনিধি। সংগঠন বিষয়ে দলের নেতৃত্বই শেষ কথা বলবেন।”