এনআরসি-বিরোধী সভা
কংগ্রেসের চেনা মুখ, দল বদলে তৃণমূলে পা রাখতেই অদৃশ্য টুপিতে দু-দুটো পালক জায়গা করে নিচ্ছে— এমন নজির হালফিলে নেই।
সাংসদ নির্বাচিত করে এবং জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে আবু তাহেরের কপালে দলনেত্রী বড়সড় তিলক এঁকে দিয়েছিলেন বটে, তবে দলের জেলা নেতাদের অনেকেই তা যে খোলা মনে নেননি, ভ্রুয়ের ভাঁজেই তা স্পষ্ট ছিল।
তাই, মঙ্গলবার দলের এনআরসি বিরোধী সভার আয়োজকের দায়িত্ব এক অর্থে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আবু তাহেরের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রমাণের পরীক্ষায়। দলের অন্দরের খবর ছিল, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্কদের নিয়ে এসে মাঠ ভরানোর সেই পরীক্ষায় বাধা আসবে। দলের ঘনিষ্ঠদের কাছে তাহের নিজেও সে আশঙ্কা আড়াল করেননি।
বহরমপুর শহরে সভাস্থলে পৌঁছনোর আগেই যানজটে তাহের ঘনিষ্ঠদের থমকে দিয়ে তাঁর নম্বর কমিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন জেলা সবাপতির কাছের নেতারা। দিনভর সচল থেকে, যানজটের খবর পেলেই কখনও ছুটে গিয়ে কখনও ফোনে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে সেই জট ছাড়িয়ে মাঠ ভরিয়ে ফুল মার্কস নিয়ে এ দিন পরীক্ষায় পাশ করে গিয়েছেন তাহের বলে মনে করছেন তাঁর অনুগামীরা। সভা শেষে তাঁদেরই এক জন তাই বলছেন, ‘‘এ ভাবে কি দক্ষ সংগঠককে আটকে রাখা যায়!’’
ভরা ওয়াইএমএ দেখে তাই দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে জেলায় তাহের বিরোধী হিসেবে পরিচিতরাও কবুল করেছেন, ‘তাহের পাশ!’
মঞ্চ থেকেই সভা সফল করার জন্য এ দিন তাহেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুব্রত সাহা, উত্তরবঙ্গ পরিবহণ দফতরের চেয়ারম্যান তথা কান্দির পুরপ্রধান অপূর্ব সরকার, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন। সভা শেষে তাহের নিজেও বলছেন, ‘‘মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। সভা একশো শতাংশ সফল। মাঠে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ যাবত, দলের যত সভা হয়েছে, সেখানে চাঁদা আদায় করে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সভায় কর্মী-সমর্থকদের টানতে ব্যবস্থা করা হয়েছে খাবারের প্যাকেটের। এ সভায় অবশ্য তার কোনওটাই ছিল না। তবু সভায় লোকসামাগম দেখে সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে মাঠ ভরিয়ে তোলার জন্য তাহেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ দলের বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল বলেন, ‘‘এই বিশাল জনসভার কারিগর আবু তাহের।’’ ডোমকলের প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনও বলেন, ‘‘সভা সফল করার জন্য তাহের চাচাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এই ভিড় জানাচ্ছে দল যোগ্য নেতৃত্বে রয়েছে।’’ যা শুনে আবু তাহের বলছেন, ‘‘এ দিনের সভার ভিড় আমাকে পাশ করিয়ে দিয়েছে। তবে যাঁরা বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা নিচুতলার কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ততার কাছে হার মেনেছেন!’’