Plastic pollution

রাস্তায় প্লাস্টিক ফেললে তেড়ে যান, ‘নীরব’ থেকে পরিবেশ রক্ষার বার্তা করিমপুরের হায়দরের

নদিয়ার নাজিরপুর হাগনাগাড়ি থেকে নতিডাঙা করিমপুর। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় অবাধ বিচরণ হায়দরের। কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হায়দর শুরু করে দেন রাস্তার দু’পাশ সাফাইয়ের কাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৮
Share:

হায়দর শেখ। নিজস্ব চিত্র।

কোনও দোকানের সামনে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখলেই দোকানদারকে ‘ভেংচি কেটে’ তেড়ে যান। তিনি রাস্তায় থাকলে প্লাস্টিক ফেলে কার সাধ্যি! তিনি বলতে হায়দর শেখ। এলাকা স্বচ্ছ রাখতে আক্ষরিক অর্থেই নীরবে কাজ করে চলেছেন নদিয়ার করিমপুরের বছর পঁয়ত্রিশের এই মূক এবং বধির যুবক।

Advertisement

নদিয়ার নাজিরপুর হাগনাগাড়ি থেকে নতিডাঙা করিমপুর। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় অবাধ বিচরণ হায়দরের। কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হায়দর শুরু করে দেন রাস্তার দু’পাশ সাফাইয়ের কাজ। প্রাতর্ভ্রমণকারীরা পথে বেরিয়ে দেখতে পান ঝাঁ চকচকে রাস্তা। কোথাও পড়ে নেই এক টুকরো প্লাস্টিক। রাস্তায় ফেলে দেওয়া ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল, প্লাস্টিক এ সব নিজের হাতে সরিয়ে পুড়িয়ে দেন হায়দর। দিনের পর দিন এ ভাবেই রাস্তা সাফ করেন তিনি।

করিমপুর-২ ব্লকের থানারপাড়ায় বাড়ি হায়দরের। ছোটবেলা থেকেই কথা বলতে পারেন না। আবার শুনতে পান না কানেও। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে দিনমজুর দাদার কাছে মানুষ হায়দার। নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা সংসারের। কিন্তু রাস্তায় কেউ প্লাস্টিক ফেললেই ঝুঁকে চলা হায়দর আচমকা সোজা হয়ে ওঠেন। তেড়ে যান। আকারে-ইঙ্গিতে এবং ইশারায় ক্ষোভ জানান। তার পর প্লাস্টিকের টুকরো তুলে নিয়ে নষ্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। হায়দরের ভাই গাজলু শেখের কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই প্লাস্টিকের প্রতি ওর চরম ঘৃণা। মানুষের ক্ষতি হবে হয়তো, এটাই ভেবে দু’হাতে সুন্দর ভাবে সেগুলি গুছিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। কথা বলতে পারে না বলে স্কুলেও যাওয়া হয়নি ওর। বাড়িতেও খুব একটা থাকে না।’’

Advertisement

দিনভর এ ভাবেই নোংরা সাফ করে চলেন হায়দর। চায়ের দোকানে কেউ কেউ কখনও ইশারায় ডেকে তাঁর হাতে তুলে দেয় চা-বিস্কুট দেয়। তাতেই তাঁর ভারী আনন্দ। খাবারের অপচয় একদম দেখতে পারেন না হায়দর। নাজিরপুর, হাগনাগাড়ি, থানারপাড়া, গমাখালি, নতিডাঙার মানুষজন এক ডাকে চেনেন তাঁকে। নাজিরপুরের সৈকত দাস বললেন, ‘‘আমরা সকলে যখন নিশ্চিন্তে ঘুমাই তখন আমাদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক উনি সরিয়ে দেন। বিনিময়ে কারও কাছে পয়সা নেন না। যে যা দেন তাই খান।’’

গমাখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মণ্ডল চেনেন হায়দরকে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও স্কুলে পড়ে পরিবেশ সচেতনতার পাঠ ও নেয়নি। অথচ পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে যথেষ্টই সজাগ। ও দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত হয়ে এখানে ওখানে খেয়ে বেঁচে আছে। আমরা চাই ওর খাওয়া-পরার প্রয়োজন মিটিয়ে ওকে সমাজসেবার কাজে নিয়োগ করুক প্রশাসন।’’

দু’হাতে যন্ত্রের গতিতে গ্রামের পর গ্রাম, রাস্তার পর রাস্তা সাফ করে ফেলেন হায়দর। তাঁর সারা দিন কাটে গ্রামের পথে পথে, প্লাস্টিক খুঁজে। হায়দরের কথা শুনে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের করিমপুর কেন্দ্রের সম্পাদক সমিত দত্ত বলেন, ‘‘হায়দার বধির হলেও হয়তো শুনতে পান মাটির কান্নার শব্দ। ওর প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে মৃত্তিকা দূষণের হাত থেকে কিছুটা হলেও পরিবেশ বেঁচে যাচ্ছে। আমরা ওঁর থেকে এই শিক্ষাটা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement