Nabanna

আবাসের শর্ত নবান্নের কাছে শাঁখের করাত

অনেক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, কার্যত কেন্দ্রের ‘ফাঁদে’ পড়তে হয়েছে রাজ্যকে। প্রশাসনিক ভাবে তো বটেই, রাজনৈতিক ভাবেও রাজ্যকে কাঠগড়ায় তোলার ‘সুযোগ’ পেয়েছে তারা।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০৮
Share:

আবাসের শর্ত নিয়ে উভয় সঙ্কটে নবান্ন। — ফাইল চিত্র।

অনেক শর্ত আরোপ করে বঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে কেন্দ্র। এমনিতেই এই কর্মসূচিতে যাদের বাড়িঘর পাওয়ার কথাই নয়, ব্যাপক অনিয়মে তাদের অনেকে প্রকল্পের টাকায় ঘরদোর গুছিয়ে নেওয়ায় রাজ্য সরকার আতান্তরে পড়েছে। তার উপরে কেন্দ্রের চোদ্দো দফা শর্ত নাগপাশ হয়ে বেঁধেছে নবান্নকে।

Advertisement

সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় অর্থ ব্যবহারের কিছু শর্ত থাকে। কিন্তু এই আবাস যোজনার চতুর্দশ শর্ত কার্যত শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। শাঁখের করাত কেন? প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নিয়মের ‘কড়াকড়ি’ অক্ষরে অক্ষরে মানতে হলে এই কর্মসূচির উপভোক্তাদের একটি বড় অংশের কাছে রাজ্য প্রশাসনের অপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রবল। পঞ্চায়েত ভোটের বাক্সে উপভোক্তাদের সেই ক্ষোভের ছাপ পড়লেও পড়তে পারে। আবার শর্ত না-মানলে রাজ্যকে পড়তে হতে পারে কেন্দ্রের রোষে। সে-ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বরাদ্দ সরবরাহের বিষয়টি ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে পারে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলা-কর্তারা শীর্ষ মহলকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বিধি পুরোপুরি মানতে গেলে জেলা-পিছু গড়ে বাদ যাবেন ৩০-৪০% উপভোক্তা। বিধি যদি ন্যূনতম ভাবেও মান্য করা হয়, অন্তত ১৫% করে উপভোক্তা বাদ পড়বেন।

Advertisement

বাংলায় ৩১৭৯টি গ্রামে কমবেশি ৪৬ লক্ষ উপভোক্তা ছিলেন আবাস (প্লাস)-এর আওতায়। প্রকল্পের নাম বদল, ত্রুটিপূর্ণ উপভোক্তা তালিকা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় আট মাস বন্ধ থাকার পরে পুনরায় এই প্রকল্পের বরাদ্দ পাচ্ছে রাজ্য। অন্যতম প্রধান শর্ত, তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে অযোগ্যদের। ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতাও তুঙ্গে।

বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “প্রকল্পের কাজ সরাসরি করবে, যাতে কেউ এখান থেকে টাকাপয়সা নিতে না-পারে। যার চারতলা বাড়ি রয়েছে, সে বাড়ি পেয়ে গেল, আর যার কিছু নেই, সে পেল না— এটা চলবে না।” প্রাপক-তালিকাকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে মুখ্যসচিবও নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

অনেক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, কার্যত কেন্দ্রের ‘ফাঁদে’ পড়তে হয়েছে রাজ্যকে। প্রশাসনিক ভাবে তো বটেই, রাজনৈতিক ভাবেও রাজ্যকে কাঠগড়ায় তোলার ‘সুযোগ’ পেয়েছে তারা। ফলে বাড়ি ঘিরে বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের সামনে।

এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় দল কয়েক বার বঙ্গে ঘুরে গিয়েছে। তাদের পরামর্শ ও প্রস্তাব অনুযায়ী সব ধরনের সংশোধনী পদক্ষেপ করতে হয়েছে রাজ্যকে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কেন্দ্রকে আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও ত্রুটিরই পুনরাবৃত্তি হবে না। ফের আসতে পারে কেন্দ্রীয় দল। সতর্ক থাকতেই হবে রাজ্যকে।” পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “ন্যায্য যা, সেই পদক্ষেপই করবে সরকার। সরকারের লক্ষ্য, যোগ্য উপভোক্তারা সুবিধা পান। সেটাই মান্যতা পাবে।”

প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, পুলিশ নিয়ে একাধিক স্তরে উপভোক্তা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। বলা হয়েছিল, যাচাই করতে গিয়ে কর্মী-অফিসারদের কেউ আক্রান্ত বা নিগৃহীত হলে কড়া পদক্ষেপ, এমনকি গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারে পুলিশ। তার পরেও বিভিন্ন জেলা থেকে যাচাই-কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement